ময়মনসিংহের ফুলপুরের লাউয়ারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেনকে মারধর করেছেন ওই স্কুলের জমিদাতার দুই ছেলে। বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ক্লাস চলাকালে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে ঢুকে হামলা করা হয়। পরে তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করেন শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীরা।
এ ঘটনায় আজ বৃহস্পতিবার উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ অর্ধশতাধিক শিক্ষক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। ফুলপুর থানায় মামলাও দায়ের করা হয়।
ভুক্তভোগী শিক্ষক ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, লাউয়ারী গ্রামের ঈমান আলীর দুই ছেলে বেশ কিছুদিন ধরে প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেনকে নানাভাবে হয়রানি করে আসছেন। বাবা ঈমান আলী ওই স্কুলের জমিদাতা হওয়ায় স্কুল উন্নয়ন খাতে কোনো কাজ করতে হলে তার দুই ছেলে রাসেল মিয়া ও আন্নাছ আলীর অনুমোদন নিতে হয়। এ জন্য তাদেরকে চাঁদা দিতে হয়।
গতকাল বুধবার সকালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য ইট, বালু ও সিমেন্ট আনা হয়। এ খবর পৌঁছামাত্র প্রধান শিক্ষকের কক্ষে দুই ভাই ঢুকে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দিলে উন্নয়নকাজ করতে দেওয়া হবে না বলে জানান। তবে প্রধান শিক্ষক জানান, কোনো টাকা দেওয়া হবে না। একপর্যায়ে প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা শুরু হয়। এ সময় দুই ভাই রাসেল ও আন্নাছ প্রধান শিক্ষকের ওপর দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা করেন ও লাঞ্ছিত করেন। পরে সহকারী শিক্ষক নওরীন মোর্শেদা, স্থানীয় আব্দুল মজিদ ও বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা প্রধান শিক্ষককে রক্ষা করতে এগিয়ে এলে হামলাকারীরা দ্রুত পালিয়ে যান। প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেনকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে স্থানীয় উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এ ঘটনায় আজ দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর অভিযোগ দেওয়া হয়। বিকেলে ফুলপুর থানায় ভুক্তভোগী শিক্ষক আনোয়ার হোসেন রাসেল ও আন্নাছকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত হামলাকারী দুই ভাইকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।
আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমার কক্ষে ঢুকে আমাকে পেটানো হয়েছে। আমার সহকর্মীরা না থাকলে আমাকে মেরে ফেলত। আমি সঠিক বিচার চাই।’
ফুলপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শীতেষ চন্দ্র সরকার বলেন, ‘ক্লাস চলাকালে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে ঢুকে হামলা ও লাঞ্ছনার বিষয়ে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি ফুলপুর থানার ওসি খুব গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছেন। অভিযোগ প্রমাণিত হলে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’