ময়মনসিংহ নগরীর রয়েল মিডিয়া কলেজে শিক্ষক ছাত্রের নিকট পাঠ্য বই না থাকার কারণ জানতে চাইলে ছাত্র অসৌজন্যমূলক আচরণ করে। এতে রাগান্বিত হয়ে ছাত্রকে বেত্রাঘাত করেন শিক্ষক। এতে ওই ছাত্র ক্ষিপ্ত হয়ে থানায় গিয়ে শিক্ষকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে।
এ ঘটনার এক সপ্তাহ পর আজ বৃহস্পতিবার ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে থানায় হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা হয়েছে। অভিযুক্ত শিক্ষক হলেন ওই কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মু. ইমরুল হাসান সিদ্দিকী (৪৮)।
কলেজ ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত ৩১ আগস্ট সকালে একাদশ শ্রেণির বাংলা ক্লাস চলছিল। এ সময় বাংলা শিক্ষক মু. ইমরুল হাসান সিদ্দিকী কে কে ব্যাকরণ বই আনেনি জানতে চাইলে আসিফ ইকবাল শাওন নামের ওই ছাত্র বেঞ্চে বসেই হৈ-হুল্লোড় ছাড়াও নানা অঙ্গভঙ্গি করে। এ সময় কোনোভাবেই তাকে থামানো যাচ্ছিল না। এ অবস্থায় শিক্ষক ইমরুল হাসান একটি বেত এনে তার কাছে গিয়ে ভয় দেখান। এতে ওই ছাত্র বাজে মন্তব্য করে। তখন শিক্ষক রেগে গিয়ে ওই ছাত্রের গায়ে কয়েকটি আঘাত করেন। এ সময় ক্ষিপ্ত হয়ে শ্রেণিকক্ষ ত্যাগ করে বাইরে চলে যায় শাওন। পরে থানায় গিয়ে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করে সে।
এদিকে ঘটনাটি ভিন্ন খাতে যাচ্ছে ভেবে অভিযুক্ত শিক্ষক ইমরুল হাসান ওই ছাত্র ও তার মা-বাবার কাছে গিয়ে ঘটনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। সে সময় ছাত্রের বাবা মো. জসিম উদ্দিন ওই শিক্ষককে আশ্বস্ত করলেও ঘটনার এক সপ্তাহ পর আজ বৃহস্পতিবার অভিযোগটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়।
এ ব্যাপারে ছাত্র আসিফ জানায়, কলেজে ওই শিক্ষকের লেখা একটি ব্যাকরণ বই পাঠ্য হয়েছে। কোনো শিক্ষার্থী বইটি না কিনে থাকলে ভয়ভীতি দেখানো হয়। সেই সাথে ক্লাসে এসে মা-বাবাসহ গালাগাল করেন তিনি। এতে সব সময় ভয়ে তাদের তটস্থ থাকতে হয়। এ অবস্থায় গত ৩১ আগস্ট ক্লাস চলাকালে শিক্ষক জানতে চান কে কে বই আনেনি। এক পর্যায়ে যাদের বই নেই তাদের গালাগালি করে শ্রেণিকক্ষে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। একসময় সকলকে বসিয়ে দিলেও তাকে বেত দিয়ে ১৫ থেকে ২০টি আঘাত করে নানা কথা বলে অপমান করেন। পরে বাধ্য হয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে সে।
শিক্ষক ইমরুল হাসান বলেন, ‘বই পাঠ্য করেছে কর্তৃপক্ষ। সেই বই যদি কেউ না আনে তবে জবাব চাওয়া যাইতেই পারে। এই জন্য ওই ছাত্র বাজে উচ্চারণ করায় কয়েকটি বেত্রাঘাত করা হয়েছিল। পরে ওই ছাত্রের কাছে দুঃখ প্রকাশ ছাড়াও তাদের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে তার বাবা-মায়ের কাছে ক্ষমা চাওয়া হয় অভিযোগটি তুলে নেওয়ার জন্য।’
এ ব্যাপারে রয়েল মিডিয়া কলেজের অধ্যক্ষ স্নেহাশীষ চন্দ্র দে বলেন, ‘এটা অত্যন্ত দঃখজনক ঘটনা। এ রকম ঘটনা আমার জীবনে শুনিনি। শ্রেণিকক্ষে ওই শিক্ষক শুধু বলেছিলেন কেন বই আনা হয়নি। এতে ছাত্র বেয়াদবি করেছিল।’
তিনি আরো বলেন, ‘একজন ছাত্রকে শিক্ষক শাসন করতেই পারেন। এ জন্য ঘটনা মামলার পর্যায়ে গড়াবে, তা ভাবতেও অবাক লাগে। এটা হয়েছে তৃতীয় কারো ইন্ধনে।’
ময়মনসিংহ কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আনোয়ার হোসেন মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মামলার পরপরই তিনি বৃহস্পতিবার বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তদন্তে নেমেছেন।