মহুয়া-মলুয়া আর চন্দ্রাবতী রাতের প্রচ্ছদপট ময়মনসিংহ সংস্কৃতির নগরী। উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন এ জেলার পরিচিতির ক্ষেত্রে বড় একটা জায়গা দখল করে আছে গৌরবময় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। তবে নানান সীমাবদ্ধতা, পৃষ্টপোষকতার অভাব, আর্থিক দৈন্য, নিবেদিত প্রাণ সংগঠকের অভাব, মঞ্চ সমস্যাসহ নানা কারণে ময়মনসিংহের সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড অতীতের তুলনায় এখন অনেকটাই ম্রিয়মাণ।
এতো সমস্যা সত্ত্বেও এই জেলায় গান-নৃত্যু-নাটক ও আবৃত্তি চর্চা করে যাচ্ছে ছোট-বড় প্রায় শ-খানিক সাংস্কৃতিক সংগঠন। সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে তারা ফুটিয়ে তোলেন ময়মনসিংহের ইতিহাস-ঐতিহ্য। কিন্তু পৃষ্ঠপোষকতা ও সুযোগ-সুবিধার অভাবে দিনদিনই হারিয়ে যাচ্ছে বেশিরভাগ সংগঠন। দুই-একটি যাও অস্থায়ী কার্যালয় নিয়ে সংস্কৃতি চর্চার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সেখানেও তারা নানাভাবে হচ্ছেন বাধাগ্রস্ত।
সম্প্রতি ময়মনসিংহ নগরীর কাচারিঘাট এলাকায় অভিযান চালিয়ে কয়েকটির সাংস্কৃতিক চর্চা কেন্দ্র সরকারি জায়গা থেকে উচ্ছেদ করা হয়। নোংরা-আবর্জনার স্তুপ অপসারণ করে সাংস্কৃতিক চর্চার জন্য গড়ে তোলা হয়েছিলো জেলার সবচেয়ে সক্রিয় নাট্য সংগঠন অনসাম্বল থিয়েটারসহ কয়েকটি সংগঠনের কার্যালয়। অভিযান চালিয়ে সেগুলো ভেঙে ফেলা হলে শুরু হয় নানা আলোচনা-সমালোচনা।
উচ্ছেদের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বুধবার (৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অভিনব প্রতিবাদ করেছে সংস্কৃতিকর্মীরা। এসময় অনসাম্বল থিয়েটারের ব্যানারে নাট্যকর্মীরা শরীরের জামা খুলে রঙ মেখে শিকল পড়ে খোলা আকাশের নিচে মঞ্চস্থ করে পারফর্মির আর্ট ‘নীলকথন’। এতে তারা অনসাম্বল থিয়েটারের নিজস্ব মহড়া কক্ষ ও সাংস্কৃতিকপল্লী গড়ে তোলার দাবি জানান।
পরে একই দাবিতে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হকের কাছে স্মারকলিপি পেশ করে সংস্কৃতিকর্মীরা।
অনসাম্বল থিয়েটারের সভাপতি আবুল মনসুর বলেন, সংস্কৃতপল্লীর দাবিতে আমরা এক বছর আগেও ৪৫ টি সংগঠন মিলে স্মারকলিপি দিয়েছিলাম কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা কোনো ধরণের রেসপন্স পাইনি। এতদিন সংস্কৃতি চর্চার জন্য আমরা বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছিলাম কোথাও ভাড়ায় ঘর পাওয়া যায় কিনা কিন্তু সাংস্কৃতিক সংগঠনকে কেউ বাড়িভাড়া দিতে চায় না। সেজন্য বাধ্য হয়েই কাচারিঘাটে পরিত্যক্ত নোংরা একটি স্থান পরিষ্কার করে ওই স্থানেই মহড়া চালাচ্ছিলাম আমরা। কিন্তু সেই স্থান থেকেও আমাদের উচ্ছেদ করে দেয়া হয়েছে। এখন আমাদের মহড়া করার জন্য আর কোনো জায়গা নেই। যদি আমাদের একটি জায়গা লিজ বা বরাদ্দ দেয়া না হয় তাহলে আমাদের সাংস্কৃতিক চর্চা বন্ধই হয়ে যাবে। একইসাথে সরকারিভাবে সংস্কৃতিপল্লী গড়ে তোলার দাবি জানাচ্ছি।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন, আমরা ইতিমধ্যেই সাংস্কৃতিককর্মীদের কাছ থেকে বিভিন্ন দাবি দাওয়া পেয়েছি। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সংস্কৃতি পল্লী করা। যেহেতু সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী এই ময়মনসিংহেরই বাসিন্দা। আমরা এ দাবিটি নিয়ে তার কাছে যাবো। আশাকরি তিনি সংস্কৃতিপল্লী গড়ার উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।