বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন কলেজছাত্রী। এ অবস্থায় উপায় না দেখে বিয়ের দাবিতে ধর্ষকের বাড়িতে গিয়ে হাজির হয়ে অনশন শুরু করেন। পরদিন চেয়ারম্যান, মেম্বার ও এলাকার মাতব্বরসহ শত শত মানুষের সামনে তরুণী ধর্ষণের বর্ণনা দেন। তা শোনেন সালিশকারীরা।
সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, পাঁচ কাঠা জমি লিখে দিয়ে ধর্ষকের সাথেই বিয়ে হবে তরুণীর। চারদিন পর ধর্ষকের পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) রাতে ওই কলেজছাত্রীকে থানায় নেয় পুলিশ। চলে আলোচনা-সমালোচনা। পরদিন মঙ্গলবার পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ওই তরুণীর বাড়ি উপজেলার সিংরুইল ইউনিয়নের একটি গ্রামে। উপজেলা সদরের একটি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়েন। মোবাইল ফোনে পরিচয় হয় উপজেলার চন্ডীপাশা ইউনিয়নের এক যুবকের সাথে। পেশা তিনি একজন ইলেকট্রিশিয়ান।
ওই তরুণী জানান, পরিচয়ের সূত্র ধরে চলে প্রেম। একপর্যায়ে বিয়ে করার কথা বলে তাকে বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে শারীরিক সর্ম্পক গড়ে তোলেন যুবক। বিয়ের কথা বললে আজ না কাল বলে কালক্ষেপণ করে এড়িয়ে চলেন। এক সময় মোবাইল ফোন বন্ধ করে গা ঢাকা দেন। খোঁজ করেও সন্ধান পাওয়া যায়নি তার। পরে কোনো উপায় না দেখে তিনি গত ৩০ আগস্ট প্রেমিকের বাড়িতে গিয়ে বিয়ের দাবিতে অবস্থান নেন। টের পেয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যান যুবক। ঘটনাটি নিয়ে অভিযুক্তের পরিবার তরুণীকে তাড়ানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়।
পরে স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বারের দ্বারস্থ হলে গত ১ সেপ্টেম্বর সালিশের দিন তারিখ ধার্য হয়। ওই দিন ছেলের ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, মেয়ের ইউনিয়ন সিংরুইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছাড়াও উভয় ইউনিয়নের প্রায় হাজার খানেক মানুষ সালিশে উপস্থিত ছিলেন। বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টা সালিশ চলে। এসময় ঘরের ভেতরে অবস্থান করা তরুণীর বক্তব্য শুনতে চান সালিশকারীরা। তারা প্রকাশ্যে বক্তব্য শুনে সিদ্ধান্ত দেন, পাঁচ কাঠা জমি (৫০ শতক) জমি লিখে দিয়ে আগামি দু’দিনের মধ্যে বিয়ে কাজ সম্পন্ন করতে। অন্যথায় আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। কিন্তু অভিযুক্ত উপস্থিত না থাকায় আরও একদিন সময় নিলেও কোনো কাজ হয়নি। বরঞ্চ সিদ্ধান্ত না মেনে অভিযুক্তের পক্ষ থেকে থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে পুলিশ গত সোমবার রাতে তরুণীকে থানায় নিয়ে আসে।
সালিশে থাকা এলাকার ইউপি সদস্য সেজু জানান, মেয়েটির বক্তব্য শুনেই পাঁচ কাঠা জমি লিখে দিয়েই বিয়ে করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু পরে বিষয়টা কেন উল্টে গেল জানা যায়নি।
সালিশে সভাপতিত্ব করেন চন্ডীপাশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহাব উদ্দিন। তিনি সালিশের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এসব বিষয়ে তো সালিশ দরবার চলে না। তবু এলাকার লোকজনের চাপে পড়ে যেতে হয়েছে। সেখানে ফয়সালার মতো সিদ্ধান্ত হয়েছিল। পরে কেন তা বাস্তবায়িত হয়নি জানা নেই।
সিংরুইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সাইফুল ইসলাম জানান, মেয়েটি খুবই অসহায়। প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করেছে। এই অবস্থায় তারা মনে করছিলেন মামলা-মোকদ্দমায় না গিয়ে বিয়ে করানো। এখন তো বিষয়টি জটিল হয়ে গেছে।
তরুণীকে থানায় নিয়ে যান নান্দাইল থানার উপ-পরিদর্শক বাবলু রহমান খান। তিনি জানান, মূলত তাকে ওই পরিস্থিতি থেকে নিরাপদ রাখতে নিয়ে আসা হয়েছে। এখন যদি মেয়ের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায় তাহলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।