নেত্রকোনায় তিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) বদলি করা হয়েছে। এর মধ্যে আলোচিত কেন্দুয়ার ইউএনও মাহমুদা বেগমও আছেন। তাঁকে পাশের উপজেলা মদনে পদায়ন করা হয়েছে।
আজ বুধবার ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার মো. খবিরুল আহসান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়।
বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নেত্রকোনার কেন্দুয়া, মদন ও খালিয়াজুরী—এই তিন উপজেলার ইউএনওকে বদলি করা হয়। তাঁদের মধ্যে কেন্দুয়ার ইউএনও মাহমুদা বেগমকে মদনে, মদনের ইউএনও আবুল কালাম মো. লুৎফর রহমানকে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় পদায়ন করা হয়েছে। কেন্দুয়ায় নতুন ইউএনও হিসেবে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে যুক্ত কাবেরী জালালকে আর খালিয়াজুরীতে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে যুক্ত মো. এরশাদুল আহমেদকে পদায়ন করা হয়েছে।
স্থানীয়দের বাধা উপেক্ষা করে কেন্দুয়া উপজেলার বলাইশিমুল গ্রামে ১ একর ৮৭ শতক জমির মধ্যে খেলার মাঠের ৪৬ শতক জায়গা কান্দা শ্রেণিতে পরিবর্তন করে সেখানে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর আওতায় গৃহহীনদের ঘর নির্মাণের কাজ চালিয়ে ইউএনও মাহমুদা বেগম আলোচনায় আসেন। মাঠ রক্ষায় এলাকাবাসীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। একই সঙ্গে স্থানীয় হাবিবুর রহমান মণ্ডলসহ আটজন বাদী হয়ে গত ৩০ মে আদালতে একটি মামলা করেন।
গত ২ জুন রাতের আঁধারে দুটি নির্মাণাধীন ঘরের গাঁথুনি ভেঙে দেয় দুর্বৃত্তরা। পরের দিন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী বাদী হয়ে ১৯ জনের নামে মামলা করেন। এরপর পুলিশ পাহারায় ঘরের নির্মাণকাজ চলে। মাঠের পশ্চিম পাশে ২৪ শতক জায়গায় ১২টি ঘর বানানো হয়। ১৩ আগস্ট ভোরে সেখানকার দুটি ঘরে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় ৬৩ জনের নাম উল্লেখ করে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা বাদী হয়ে মামলা করেন।
ঘর পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনার সংবাদ সম্মেলন করেন ইউএনও মাহমুদা বেগম। সংবাদ সম্মেলনে আগুন দেওয়ার ঘটনায় আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় এক নেতাসহ কয়েকজনকে দোষারোপ করেন। এনএসআই, ডিজিএফআইয়ের গোয়েন্দা প্রতিবেদন থেকে তিনি এসব জেনেছেন বলে উল্লেখ করেন। সরকারি দল, বিরোধী দল সবাই মিলে ষড়যন্ত্র করেছেন বলে দাবি করেছিলেন ইউএনও। এ ছাড়া সংবাদ সম্মেলনে পুরো বলাইশিমুলে গ্রেপ্তারসহ ইউনিয়নের সবার বিরুদ্ধে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন।
ওই সংবাদ সম্মেলনে ইউএনওর বক্তব্যের ভিডিও দৈনিক সংবাদ ও ডেইলি অবজারভারের উপজেলা প্রতিনিধি হুমায়ূন কবীর নিজের ফেসবুক পেজে পোস্ট করেন। পরে ইউএনও ওই সাংবাদিককে মামলায় জড়ানোর হুমকি দেন। এরপর গত শুক্রবার সন্ধ্যায় বলাইশিমুল ঈদগাহে ইউনিয়নের ২৮ গ্রামের বাসিন্দাদের গণ বৈঠকে ইউএনও মাহমুদা বেগমকে বলাইশিমুল ইউনিয়নে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। একই সঙ্গে তাঁকে অপসরণের আল্টিমেটাম দেওয়া হয়।