চকচকে আমেরিকান ডলার দেখিয়ে ফাঁদ পাতা হয় প্রতারণার। যাচাইয়ের সময় আসল ডলার দেখানো হলেও কিনতে এলে মারধর করে রেখে দেওয়া হয় সব টাকা। শুধু ডলার নয়, সোনার পুতুল, কষ্টিপাথর এমনকি ষাঁড় গরু দেখিয়েও ফাঁদ পাতা হয়।
ক্রেতা সেজে ওই চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১৪-এর একটি দল। ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মগটুলা ও মাইজবাগ এলাকায় চক্রটি প্রতারণা করে আসছে।
গত রোববার রাতে মগটুলা ইউনিয়নের ধীতপুর দক্ষিণবাজার এলাকায় অভিযান চালায় র্যাব। প্রতারক চক্রের তৎপরতার খবর পেয়ে র্যাবের দলটি ক্রেতা সেজে ফাঁদ পাতে। পরে মো. সোহেল মিয়া (৩৫) ও মো. খালেকুজ্জামান তুহিনকে (২৫) গ্রেপ্তার করা হয়।
সোহেল দুর্গাপুর গ্রামের মৃত সোবহান ফকিরের ছেলে। আর পাড়াবাসাটি গ্রামের মো. আতাউর রহমানের ছেলে তুহিন।
তাঁদের কাছ থেকে ৩২১টি জাল ডলার ও দুটি মোবাইল ফোনসেট জব্দ করা হয়েছে। গ্রেপ্তার দু’জনকে ঈশ্বরগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করেছে র্যাব। সোমবার তাঁদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই এলাকায় ডলার প্রতারণা চলছে অন্তত দেড় দশক ধরে। প্রতারক চক্রের সাবেক এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এলাকার নিম্ন আয়ের মানুষ বিভিন্ন স্থানে রিকশা চালানো বা শ্রমিকের কাজ করেন। কিছুদিন পর মালিকের কাছে বলতে শুরু করেন ডলার সম্পর্কে। বলা হয়, এক নারী সিলেটে কাজ করতেন লন্ডন প্রবাসীর বাড়িতে। সেখান থেকে কাগজের মতো কী নিয়ে এসেছেন। কয়েক দিন বলার পর ওই ব্যক্তি কৌতূহলী হয়ে দেখতে আসেন কাগজগুলো।
তখন আসল ১৫-২০টি ডলার দেওয়া হয়। কার্টুন ও বস্তাভর্তি আরও ডলার আছে বলে বুঝানো হয় তাঁকে। তা দেখে সব ডলার নিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশা কিনে দেওয়ার কথা বলেন চক্রের সদস্যরা। পরে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে এলে টার্গেট করা ব্যক্তিকে মারধর করে সব টাকা রেখে এলাকা থেকে বের করে দেওয়া হয়। দুই মাসে বাঘবেড় আবদুল্লাহপুর ও দুবলী এলাকার দুটি ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। এসব ঘটনায় আটজনকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ।
এর বাইরে আরও কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন মগটুলা ইউপির সদস্য আবদুল মান্নান। তিনি বলেন, কিছু দিন বন্ধ থাকলেও ফের এ ধরনের কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছে। জড়িতদের কঠোর শাস্তি হলে এটি কমে আসবে। প্রতারণার শিকার ব্যক্তিরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আইনের আশ্রয় নেন না। ইউপি চেয়ারম্যান শিহাব উদ্দিন আকন্দ বলেন, প্রতারক চক্র সম্পর্কে উপজেলা সমন্বয় সভায়ও আলোচনা করেছেন।
র্যাব-১৪ ময়মনসিংহের সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ বেলায়েত হোসাইন বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তুহিন ও সোহেল ডলার দেখিয়ে দীর্ঘদিন প্রতারণার কথা জানিয়েছেন। ওই এলাকায় ৭-৮ জনের চক্র রয়েছে। তাদের ধরার চেষ্টা চলছে।
ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাছিনুর রহমান বলেন, মগটুলা ও মাইজবাগ এলাকায় কয়েকটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণার সঙ্গে জড়িত। স্থানীয়ভাবে ওকে পার্টি হিসেবে পরিচিত। প্রতারক চক্রকে আইনের আওতায় আনা হলেও জামিনে বেরিয়ে ফের এ কাজে জড়িয়ে পড়ছে।