1. najmush71@gmail.com : admin : Najmush Shakeer
  2. munir2002lubnan@gmail.com : Munirul Huq Khan : Munirul Huq Khan
শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৯ অপরাহ্ন

একসঙ্গে তিনজন হারিয়ে শোকে স্তব্ধ সবাই

রিপোর্টার
  • আপডেট : রবিবার, ১৭ জুলাই, ২০২২

ময়মনসিংহের ত্রিশালে ট্রাকচাপায় একই পরিবারের তিনজন (স্বামী, অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ও মেয়ে) নিহতের ঘটনায় শোকে স্তব্ধ হয়ে গেছে পরিবার, স্বজন ও এলাকাবাসী। শনিবার রাতে জানাজা শেষে উপজেলার রায়মণি এলাকার নিজ বাড়িতে তাদের দাফন করা হয়।

রোববার সকালে রায়মণি ফকির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ঘরের সামনেই উঠানে একসাথে নতুন তিনটি কবর। যেখানে শায়িত আছে দিনমজুর জাহাঙ্গীর আলম, তার স্ত্রী রত্না ও মেয়ে সানজিদা। একসঙ্গে তিনজনকে হারিয়ে তাদের কবরের পাশে বসেই অনবরত বিলাপ পাড়ছিলেন মা সুফিয়া আক্তার। আর বাকরুদ্ধ হয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে যেন বাবা-মা-বোনকে খুঁজছিলেন জাহাঙ্গীর-রত্না দম্পতির ১০ বছর বয়সী মেয়ে জান্নাত ও সাত বছর বয়সী ছেলে এবাদত।

অথচ নতুন শিশুর আগমনে এই উঠানেই থাকার কথা ছিলো আনন্দ-উচ্ছ্বাস। একটি দুর্ঘটনা কেড়ে নিয়েছে সবকিছু, আনন্দের সময়টাকে পরিণত করেছে বিষাদে। এমন ঘটনায় শোকে স্তব্ধ শুধু রায়মণি গ্রামই নয় শোকের ছায়া নেমে পুরো ত্রিশাল উপজেলা জুড়ে।

নিহত জাহাঙ্গীরের বাবা মোস্তাফিজুর রহমান বাবলু ও মা সুফিয়া আক্তার দুইজনই শারীরিক প্রতিবন্ধী। তারা জানান, জায়গা না থাকায় বাড়ির উঠানেই বানিয়েছেন কবস্থান। থাকার ঘরটিও ভাঙ্গা টিন আর মাটির তৈরি। দরিদ্র পরিবারে মোস্তাফিজই ছিল উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাকেসহ তিনজনকে একসঙ্গে হারিয়ে আরও অসহায় হয়ে পড়েছেন তারা। এখন নবজাতকসহ তিন সন্তানের ভবিষ্যতও অনেকটা অনিশ্চয়তার মুখে।

এদিকে শোকস্তব্ধ বাড়িতে আলোচনায় এখন অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া নবজাতক। মৃত মায়ের গর্ভ ফেটে জন্ম নেয়া মৃত মায়ের পেট থেকে জন্ম নেয়া শিশুকন্যাকে এক নজর দেখতে ব্যাকুল সবাই।

নবজাতকের বড় বোন জান্নাত আক্তার (১০) বলে, মোবাইলে আমার বোনের ছবি দেখেছি। আমরা তার জন্য অপেক্ষা করছি। সে বাড়িতে আসলে আমি তাকে খুব আদর করবো। দাদা-দাদি ও আমি মিলে তাকে লালন পালন করবো।- এভাবে কথা বলতে বলতেই চোখ বেয়ে পানি পরছিল তার।

এর আগে, শনিবার বিকেল পৌনে ৩টার দিকে ত্রিশালের কোর্টভবন এলাকায় রাস্তা পার হওয়ার সময় ট্রাকচাপায় প্রাণ হারান অন্তঃসত্ত্বা রত্না বেগম (৩২), তার স্বামী জাহাঙ্গীর আলম (৪০) এবং তাদের ছয় বছরের মেয়ে সানজিদা নিহত হন। এসময় অলৌকিকভাবে মায়ের গর্ভ ফেটে ভূমিষ্ঠ হয় ফুটফুটে এক সুস্থ নবজাতক। ভূমিষ্ঠ হয়ে রাস্তায় পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ছুটে যায় পুলিশ ও আশপাশের লোকজন। পরে নবজাতকটিকে উদ্ধার করে নেওয়া হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।সেখানে নেওয়ার পরই জানা যায় জীবিত আছে নবজাতক কন্যাটি।

সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও উন্নত চিকিৎসার জন্য নবজাতকটিকে ময়মনসিংহ সদরের সিবিএমসি হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে এক্সরে রিপোর্টে জানা যায় তার ডান হাতের দুইটি হাড় ভেঙ্গে গেছে। বর্তমানে শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. কামরুজ্জামানের তত্ত্বাবধানে নগরীর লাবীব হাসপাতালে সদ্যজাত শিশুটি চিকিৎসাধীন রয়েছে।

শিশুটি বিপদমুক্ত রয়েছে জানিয়ে ডা. মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, শিশুটির সামগ্রিক অবস্থা আমরা পর্যবেক্ষণ করেছি। সে ভালো আছে এবং আশঙ্কামুক্ত। যেহেতু তার মা নেই, সেহেতু তাকে ফর্মুলা দুধ খাওয়ানো হচ্ছে। আশা করছি তার কোনো ধরণের সমস্যা হবে না।

এদিকে, শিশুটির চিকিৎসা খরচ ও ভরণপোষণসহ সকল দায়িত্ব পালনের কথা জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ত্রিশালের এক ব্যক্তি। এছাড়াও তার পাশে থাকার কথা বলেছেন ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক।

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২৩ আঙ্গর টিভি