হজের নামে সৌদি আরবে গিয়ে ভিক্ষা করার সময় সে দেশের পুলিশের হাতে আটক হন মেহেরপুরের মতিয়ার রহমান। এ সংবাদ দেশে-বিদেশে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত হলে বিষয়টি ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়। এরপর মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পেলেও হজ শেষে আবারও মদিনায় ভিক্ষা শুরু করেন মতিয়ার। তার পুনরায় এই ভিক্ষা করার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।
ভিডিওতে দেখা যায়, হাজির পোশাক পরে ভিক্ষা করছেন মতিয়ার। ভিডিও ধারণকারী ব্যক্তি তাকে প্রশ্ন করেন, ‘আপনাকে নিয়ে নিউজ হয়েছে। আপনি ভিক্ষা করতে গিয়ে আটক হয়েছিলেন।’ এমন কথার কোনও উত্তর দেননি মতিয়ার। তিনি সে সময় জানান, ২৭ জুলাই পর্যন্ত ভিক্ষা করে দেশে ফিরবেন।
জানা গেছে, মতিয়ার রহমান দেশ থেকে ধানসিঁড়ি ট্রাভেল এয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে হজ ভিসা নিয়ে সৌদি আরব যান। সেখানে গিয়ে হজের আগে হাজির পোশাকে মদিনা শরিফে ভিক্ষা করার সময় গ্রেফতার হন। পরে বাংলাদেশ হজ মিশনের একজন কর্মী গিয়ে মুচলেকা দিয়ে তাকে ছাড়িয়ে আনেন। এই ঘটনায় দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার দায়ে ধানসিঁড়ি ট্রাভেলকে শোকজ করা হয়েছে। হজের নামে হাজি ভিসায় সৌদি গিয়ে ভিক্ষাবৃত্তির ঘটনায় বিব্রত ও লজ্জিত সরকারের হজ মিশন, স্থানীয় প্রশাসন এবং এলাকাবাসী। দুই হাতের কবজি না থাকায় সহজেই মানুষ-জন তাকে ভিক্ষা দেওয়ায় একাধিকবার তিনি হজ ভিসায় সৌদি আরবে যান।
হ্জ শেষে যখন হাজিরা দেশের ফেরায় ব্যস্ত সময় পার করছেন ঠিক তখন আবারও মদিনার রাস্তায় ভিক্ষা করতে দেখা যায় আলোচিত মতিয়ার রহমানকে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার সিন্দুরকোটা গ্রামের ভাটপাড়ার বাসিন্দা মতিয়ার ছিলেন ডাকাত দলের সর্দার। গ্রামে সবাই তাকে মন্টু বলে চেনেন। গণপিটুনিতে দুই হাতের কবজি কাটা পড়লে ডাকাতি ছেড়ে দিয়ে বিদেশে ভিক্ষাবৃত্তির পথ বেছে নেন।
এলাকাবাসী জানান, কম পয়সায় ভারত হয়ে হজে যাওয়া সহজ হওয়ায় প্রায় ১২-১৪ বার তিনি হজে গিয়ে ভিক্ষা করে দেশে বিপুল অর্থ এনে সম্পদ গড়েছেন। মূলত হজ করতে নয়, সেখানে গিয়ে ভিক্ষা করাই ছিল তার পেশা। সৌদি আরবে গিয়ে ভিক্ষা করে আয় করেন লাখ লাখ টাকা। নিজ গ্রামে হজ থেকে ফিরে কিনতেন জমি। বসতঘরের অবস্থা ভালো না হলেও কৃষিজমি রয়েছে ২০ বিঘা। এবার হজে গিয়ে ভিক্ষা করার সময় সৌদি পুলিশের হাতে তিনি গ্রেফতার হলে বিষয়টি জানাজানি হয় সর্বমহলে।
এমন ঘটনা দেশের জন্য খুবই লজ্জার উল্লেখ করে গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানোর পর তদন্ত শুরু হয়েছে। দেশে ফিরে এলে তার বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নেবে।’
মতিয়ারের সম্পর্কে গাংনী উপজেলার সিন্দুরকোটা গ্রামের স্থানীয় লোকজন বলেন, ‘আমরা জানি সে সৌদি আরবে হজের জন্য নয়, ভিক্ষা করতে যায়। মতিয়ার বেশ কয়েকবার হজে গিয়েছে। বেশির ভাগ সময় সে ভারতে থাকে। আমরা শুনেছি ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্থানে লোকজন নিয়ে গিয়ে ভিক্ষা করে। এবার সৌদি আরবে গিয়ে ভিক্ষা করার সময় পুলিশের হাতে আটক হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। আগে সে খারাপ লোক ছিল। তার দুই হাত নেই। গ্রামে এসে কিছুই করে না। বছরের বেশি সময় ভারতে থাকে মতিয়ার। দুই হাত না থাকায় ভিক্ষা ছাড়া কোনও কাজ করতে পারে না।’