পিরোজপুরের কচা নদীর ওপর বেকুটিয়া পয়েন্টে নির্মিত অষ্টম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুর কাজ প্রায় শেষ। নির্মাণকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এখনো সেতু সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগকে হস্তান্তর করেনি। এর আগেই সেতু দিয়ে বরযাত্রীবাহী দুটি ব্যক্তিগত গাড়ি ও একটি বাস চলাচলের অভিযোগ উঠেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে বরযাত্রীর গাড়িবহর সেতু পাড়ি দেওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ২ মিনিট ১৬ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, সেতুর পূর্ব প্রান্ত কাউখালী উপজেলার বেকুটিয়া থেকে বরযাত্রীবাহী দুটি ব্যক্তিগত গাড়ি ও একটি বাস সেতু পার হয়ে পশ্চিম প্রান্তে চলে এসেছে। সেখানে দায়িত্বরত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলার পর সেতুর ওপর থাকা ব্যারিকেট সরিয়ে বরযাত্রীরা চলে যান।
ভিডিওতে শোনা যাচ্ছে এক ব্যক্তি বলছেন, ‘এ গাড়ি উঠে এলো ক্যামনে?’ আরেক জন বলছেন, ‘ও পাশ খোলা মনে হয়।’ ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনা শুরু হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পিরোজপুর সদরের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে ঘুরতে গেছিলাম। তখনই দেখছিলাম নিয়মকানুন শুধু সাধারণ মানুষের জন্য। কিছু লোক অনায়াসে বাইক নিয়ে, গাড়ি নিয়ে সেতু পার হয়।’
সেতু এলাকায় থাকা কয়েকজন ব্যক্তি জানান, গত বুধবার দুপুরে বরযাত্রীবাহী গাড়ি সেতু পার হয়। সেতুর দুই প্রান্তে নিরাপত্তার জন্য পুলিশের চৌকি রয়েছে। এর মধ্যে দিয়ে গাড়িগুলো সেতু পাড়ি দেয়।
পিরোজপুর সদর উপজেলার কুমিরমারা গ্রামের সেতু এলাকার বাসিন্দা ও শারিকতলা ডুমুরিতলা ইউপি চেয়ারম্যান আজমির হোসেন মাঝি বলেন, ‘শুনেছি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তা পরিচয়ে এক ব্যক্তি বরযাত্রীর গাড়ি পার হওয়ার জন্য নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের বলেন। তাঁরা এ পরিচয় পেয়ে গাড়ি সেতুতে উঠতে দেন।’
বরিশাল-খুলনা পথে নিরবিচ্ছিন্ন যোগাযোগব্যবস্থা তৈরির জন্য পিরোজপুরের কচা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সেতু নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। ৯৯৮ মিটার দৈর্ঘের ও ১৩ দশমিক ৪০ মিটার প্রস্থের সেতুটি নির্মাণে ৮৮৯ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। এর মধ্যে ৬৫৪ কোটি ৭৯ লাখ টাকা চীন সরকার দিয়েছে, বাকি টাকা ব্যয় করছে বাংলাদেশ সরকার।
জানতে চাইলে পিরোজপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোল্লা আজাদ হোসেন বলেন, গতকাল বিকেলে তিনি ঘটনাটি শুনে সেতু এলাকায় গিয়ে সেখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের কাছে জানতে চেয়েছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তাকর্মীদের কে যেন ফোন দিয়ে গাড়ি ছেড়ে দিতে বলেন। বিষয়টি তাঁরা তদন্ত করে দেখছেন।
সেতুর প্রকল্প ব্যবস্থাপক ও সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদ মাহামুদ বলেন, সেতুটি চীন সরকার এখনো সড়ক ও জনপথ বিভাগের কাছে হস্তান্তর করেনি। তবে বিষয়টি শুনে তিনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে বলেছেন, নির্মাণকাজে ব্যবহৃত যানবাহন ছাড়া অন্য কোনো পরিবহন যেন সেতুতে না ওঠে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, অষ্টম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুর নির্মাণকাজ চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে ১৭ ব্যুরো গ্রুপ লিমিটেড বাস্তবায়ন করেছে। ইতিমধ্যে সেতুর ৯৬ ভাগ কাজ শেষ। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থেকে চীন সরকারের প্রতিনিধিদল সেতুর কাজ বুঝে নিচ্ছে। আগামী ২০ জুনের মধ্যে সড়ক ও জনপথ বিভাগের কাছে সেতুটি হস্তান্তর করার কথা রয়েছে। এরপর উদ্বোধন করা হবে।