ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে ময়মনসিংহের ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষ। বিদ্যুতের এ অবস্থা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছে। অন্যদিকে লোডশেডিংয়ের কারণ হিসেবে উৎপাদন ঘাটতিকে দায়ী করছেন ময়মনসিংহ বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা।
বিউবো ময়মনসিংহ বিতরণ কেন্দ্রীয় অঞ্চল সূত্রে জানা যায়, ময়মনসিংহ জেলা ছাড়াও বিভাগের বাকি তিন জেলা নেত্রকোনা, জামালপুর ও শেরপুরেও রয়েছে লোডশেডিং। ময়মনসিংহ বিভাগের এ চার জেলায় প্রতিদিন সর্বোচ্চ বিদ্যুতের চাহিদা ৭৮০ মেগাওয়াট। এর মধ্যে ময়মনসিংহ জেলার চাহিদা ৩৬০ মেগাওয়াট। চাহিদার বিপরীতে ময়মনসিংহ বিভাগের চার জেলায় সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ সরবরাহ ৬৪০ মেগাওয়াট। ঘাটতি ১৪০ মেগাওয়াট। যে কারণে ময়মনসিংহ জেলা ও ময়মনসিংহ বিভাগের বাকি তিনটি জেলায় লোডশেডিং হচ্ছে।
ময়মনসিংহ বিতরণ কেন্দ্রীয় অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এ বছর বিদ্যুতের সরবরাহ বাড়ানোর সম্ভাবনা খুব কম। তবে ময়মনসিংহের বিদ্যুৎ ঘাটতি নিয়ে আমরা মন্ত্রণালয়কে বারবার বলছি যেন ময়মনসিংহের জন্য বিদ্যুতের সরবরাহ বাড়ানো হয়।’
ময়মনসিংহ বিতরণ কেন্দ্রীয় অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ময়মনসিংহের রুরাল পাওয়ার কোম্পানি (আরপিসিএল) থেকে দৈনিক ২১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহের কথা রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে তারা ময়মনসিংহ গ্রীডে ৬৫ থেকে ১০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ দিতে পারছে। তাছাড়া জামালপুর জেলার বেসরকারি মালিকানাধীন সিকদার গ্রুপের ৯৫ মেগাওয়াটের একটি পাওয়ার প্লান্ট বন্ধ রয়েছে। ফলে সেখান থেকেও বিদ্যুৎ সরবরাহ হচ্ছে না। মূলত এই কারণে দেশের সব স্থানে বিদ্যুতের ঘাটতি না থাকলেও ময়মনসিংহে ঘাটতি রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
খবরের সত্যতা স্বীকার করেছেন ময়মনসিংহের রুরাল পাওয়ার কোম্পানির (আরপিসিএল) প্রধান প্রকৌশলী এ.এইচ.এম রাশেদ। তিনি জানান, মূলত গ্যাস নির্ভর আমাদের পাওয়ার প্লান্ট। এতে প্রতিদিন ৪২ এমএমসিএফটি গ্যাস প্রেসারের চাহিদা রযেছে। কিন্তু চাহিদার বিপরিতে সাম্প্রতিক সময়ে আমরা গ্যাস পাচ্ছি মাত্র ২০ এমএমসিএফটি। ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনে এই ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে।
তবে উৎপাদন ঘাটতির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ইতিমধ্যে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে দৈনিক ৩০ এমএমসিএফটি গ্যাস দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান তিতাসকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকৌশলী এ.এইচ.এম রাশেদ।
তিনি জানান, এই আদেশ বাস্তবায়ন হলে অর্থাৎ আরপিসিএল এ দৈনিক ৩০ এমএমসিএফটি গ্যাস সরবরাহ হলে ১৫৩ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব।
এদিকে উৎপাদন ঘাটতির কারণে রুরাল পাওয়ার কোম্পানি (আরপিসিএল) বর্তমানে ক্ষতির মুখে রয়েছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, বর্তমানে আমরা ক্ষতির মুখে আছি। টার্গেট অনুযায়ি বিদ্যুৎ বিক্রি করা যাচ্ছে না। তবে বিষয়টি জাতীয় সমস্যার কারণে মেনে নিতে হচ্ছে বলে দাবি করেন প্রতিষ্ঠানের প্রধান প্রকৌশলী এ.এইচ.এম রাশেদ।