নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগ থেকে এক ভুয়া চিকিৎসককে আটক করা হয়েছে। গতকাল রোববার রাতে পুলিশ তাঁকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পরে রাতেই মামলা করে তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। গ্রেপ্তার ওই ভুয়া চিকিৎসকের নাম সায়েম আবদুল্লাহ ওরফে জয় (২৪)। তিনি ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার নাওপাই এলাকার মাহতাব উদ্দিনের ছেলে।
এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পূর্বধলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে গতকাল বেলা দুইটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত হাসপাতালের অন্য এক চিকিৎসকের ডিউটি ছিল। তবে তিনি জরুরি বিভাগে না বসে বাইরে ব্যক্তিগত চেম্বারে বসে রোগী দেখছিলেন বলে অভিযোগ। তাঁর জায়গায় সায়েম আবদুল্লাহ নামের ওই যুবককে জরুরি বিভাগে বসিয়ে রোগী দেখার দায়িত্ব দেওয়া হয়।
সায়েম ময়মনসিংহের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে চিকিৎসা সংক্রান্ত চার বছরের ডিপ্লোমা কোর্স সম্পন্ন করেছেন। করোনার শুরুর দিকে তিনি পূর্বধলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তিন মাসের ইন্টার্ন করেন। এর পর থেকে তিনি ওই হাসপাতালে কখনো রোগী দেখছেন, আবার কখনো চিকিৎসকের সহকারী হিসেবে কাজ করছেন। গতকাল সন্ধ্যায় জরুরি বিভাগে চিকিৎসকের চেয়ারে ইউনির্ফম পরে রোগী দেখছিলেন সায়েম আবদুল্লাহ। এ সময় স্থানীয় লোকজন ও কয়েকজন রোগীর স্বজন তাঁকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি নিজেকে ওই হাসপাতালের এমবিবিএস চিকিৎসক হিসেবে পরিচয় দেন। পরে বিষয়টি সন্দেহ হলে পুলিশে খবর দেওয়া হয়। এরপর রাত আটটার দিকে পুলিশ তাঁকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই হাসপাতালের একজন কর্মচারী ও হাসপাতালের ফটকের সামনের একজন ওষুধ ব্যবসায়ী বলেন, সায়েম আবদুল্লাহ দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসকের পরিবর্তে জরুরি বিভাগে বসে রোগী দেখে প্রতারণা করে আসছেন। হাসপাতালে প্রয়োজনীয়সংখ্যক চিকিৎসক থাকলেও তাঁরা নিয়মিত রোগী দেখেন না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পূর্বধলা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবু হাসান শাহীনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। আর কল দেওয়ার পর নেত্রকোনার সিভিল সার্জন মো. সেলিম মিয়া মুঠোফোনের সংযোগ কেটে দেন। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বে থাকা ওই চিকিৎসকের মুঠোফোন নম্বরও বন্ধ পাওয়া যায়।
পূর্বধলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) আজাহারুল ইসলাম বলেন, সায়েম আবদুল্লাহ হাসপাতালের কোনো চিকিৎসক বা কর্মচারী নন। তিনি চার বছরের ডিপ্লোমা শেষ করে করোনার শুরুর দিকে এই হাসপাতালে এসে তিন মাসের ইন্টার্ন করেন। এ সময় বিভিন্ন কাজে তাঁদের সহযোগিতা করতেন। তবে রোগী দেখার অধিকার তাঁর নেই। গতকাল সন্ধ্যায় জরুরি বিভাগের চিকিৎসক যখন প্রয়োজনীয় কাজে পাশের কক্ষে যান, তখন সায়েম আবদুল্লাহ নিজেকে চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে চিকিৎসকের চেয়ারে বসে রোগী দেখেন। এ নিয়ে হাসপাতালের এক কর্মকর্তা বাদী হয়ে তাঁর বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন।
পূর্বধলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, গ্রেপ্তার ওই ভুয়া চিকিৎসককে আজ সোমবার দুপুরে আদালতে তোলা হবে।