ময়মনসিংহের নান্দাইলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া দুই মাদরাসাছাত্রী বিভিন্ন সময়ে ধর্ষণের শিকার হয়। এখন বিচারের আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরছে তাদের পরিবার। সালিসের নামে দীর্ঘ সময় পার করে এখন সটকে পড়েছেন সালিসকারীরা। এত দিনে এক ছাত্রী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে চক্ষুলজ্জায় নিজ বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র অবস্থান করছে। আরেক ছাত্রী বিচার না পেয়ে ধর্ষকের বাড়িতে গিয়ে অবস্থান করেছে।
আজ রবিবার (২৪ এপ্রিল) ধর্ষকের বাড়িতে গিয়ে অবস্থান করা ওই ছাত্রীকে মারধর করেছে ধর্ষকের পরিবারের লোকজন। এমন অভিযোগ নিয়ে থানায় যেতে সদরে আসেন ছাত্রীর বাবা। অন্যদিকে সালিসেই ফয়সালা করবেন এমন আশ্বাস দিয়ে অন্তঃসত্ত্বা ছাত্রীর পরিবারকে আইনি সহায়তা নিতে দিচ্ছেন না স্থানীয় সালিসকারীরা।
স্থানীয় সূত্র জানায়, দুটি ঘটনা উপজেলার দুই ইউনিয়নে ঘটেছে। রবিবার (২৪ এপ্রিল) সকালে উপজেলার মোয়াজ্জেমপুর ইউনিয়নের উত্তর পালাহার গ্রামে হাফিজ উদ্দিনের বাড়িতে গিয়ে হাজির হয় স্থানীয় একটি মাদরাসায় অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক ছাত্রী। তার দাবি, ওই বাড়ির রায়হান তাকে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ করেছে। এখন রায়হান বিয়ে করতে অস্বীকার করায় কোনো উপায় না পেয়ে এখানে এসেছে। বিয়ে না করলে সে যাবে না। অন্যথায় আত্মহত্যা করবে। এ ঘটনার পর ওই ছাত্রীকে চুলের মুঠি ধরে টেনে-হিঁচড়ে মারধর করে ধর্ষণে অভিযুক্তের পরিবার। এমন খবর পেয়ে বিকেলে সাড়ে ৩টার দিকে মেয়ের বাবা ও ভাই থানায় এসে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
মেয়ের বাবা জানান, রোজার এক দিন আগে তার মেয়েকে ধর্ষণ করে ওই রায়হান। এরপর স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বারদের কাছে বিচার চাইলে তারা বেশ কয়েকবার সালিস ডাকলেও ছেলের পরিবার আসেনি। এ অবস্থায় পার হয়ে যায় প্রায় ২০ দিন। এখন সালিসকারীরা এ বিচার করতে পারবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন।
সালিসের ঘটনার কথা স্বীকার করে স্থানীয় চেয়ারম্যান তাসলিমা আক্তার শিউলি জানান, মেয়ের বয়স কম হওয়ায় তিনি বিচারের দায়িত্ব দিয়েছিলেন দুই ওয়ার্ডের দুজন ইউপি সদস্যকে। তারা বেশ কয়েকবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এ অবস্থায় আর কিছুই করার নেই। মোস্তফা কামাল সঞ্জু নামের এক সালিসকারী বলেন, ‘চেষ্টার কোনো কমতি রাখি নাই। না পারলে কী করব। ‘
অন্যদিকে উপজেলার গাঙাইল ইউনিয়নের এক গ্রামের অষ্টম শ্রেণিতে মাদরাসাপড়ুয়া এক ছাত্রীকে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ করেন একই ইউনিয়নের উন্দাইল গ্রামের মৃত মোখলেছুর রহমানের ছেলে রাজন মিয়া (৩৫)। তিনি এক সন্তানের জনক। এ অবস্থায় বিষয়টি নিয়ে রাজন প্রভাব খাটিয়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে স্থানীয় সালিসকারীদের আশ্রয় নেন। সালিসকারীরা ধর্ষণের শিকার মেয়েটির পরিবারকে টাকা-পয়সা নিয়ে মীমাংসার প্রস্তাব দেন। রাজি না হওয়ায় দফায় দফায় সালিস করে বিষয়টিকে বিলম্ব করেন। এর মধ্যে জানা যায় ধর্ষণের শিকার মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা। আর এতেই বেকায়দায় পড়েন সালিসকারীরা।
জানা যায়, গরিব ঘরের মেয়েটির পরিবারকে সন্তান নষ্ট করলে মোটা অঙ্কের টাকার লোভ দেখিয়ে থানায় যেতে বাধা দেয়। বর্তমান অবস্থায় মেয়েটি তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা বলে জানা যায়। এ ব্যাপারে গাঙাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান নয়ন জানান, বিষয়টি দীর্ঘদিনের। এর মধ্যে গ্রামের মাতবররা অনেক সালিস করেছেন। সর্বশেষ খবর পেয়ে তিনি দুই পক্ষকেই ডেকেছিলেন। মেয়ের পক্ষ সাড়া দিলেও ছেলের পক্ষ আসেনি। এ অবস্থায় ফয়সালা করা যায়নি।
এ ব্যাপারে নান্দাইল থানার ওসি মিজানুর রহমান আকন্দ জানান, এ ব্যাপারে কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।