ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে ‘চলনবিল ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি’ নামে একটি ভুয়া এনজিও সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার কথা বলে কয়েক শ মানুষের কাছ থেকে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে উধাও হয়ে গেছে। এ অবস্থায় ভুক্তভোগী অনেকে স্থানীয় মাঠকর্মীদের ওপর চড়াও হয়ে টাকা আদায়ের চেষ্টা করছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ‘চলনবিল ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি’ নামের এনজিওটি চলতি মার্চ মাসের শুরুতে পৌর শহর সংলগ্ন ইমামবাড়ি বাংলালিংক টাওয়ারের কাছে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে অফিস খোলে। অফিসে এক নারীসহ বিভিন্ন পদে চারজন কর্মকর্তা ছিলেন।
তারা স্থানীয় পাঁচজন নারীকে মাঠকর্মী নিয়োগ দিয়ে প্রত্যেক মাঠকর্মীর অধীনে ১২টি করে কেন্দ্র স্থাপন এবং নিম্ন আয়ের মানুষকে সদস্য (গ্রাহক) করার নির্দেশ দেন। সে অনুযায়ী মাঠকর্মীরা উপজেলার দুগাছিয়া, পাঁচপাই, গলাকাটা, পালের বাজার, ছিপান, তেঁতুলিয়া, ষোলহাসিয়া, চরশিলাসীসহ বিভিন্ন এলাকায় ৬০টি কেন্দ্র স্থাপন করে সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার কথা বলে অসংখ্য মানুষকে সদস্য করেন। এ ছাড়া এনজিওর কর্মকর্তারাও বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে আরো অর্ধশতাধিক কেন্দ্র স্থাপন কর লোকজনকে সদস্য করেন। পরে মাঠকর্মীদের মাধ্যমে প্রতি এক লাখ টাকা ঋণের বিপরীতে সদস্যদের কাছ থেকে সঞ্চয়ী হিসাবে ১০ হাজার টাকা করে আদায় করেন। অনেকে এক লাখ থেকে চার লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণের জন্য আবেদন করে সেই হারে সঞ্চয়ের টাকা জমা দেন। গত ৩ এপ্রিল অফিসে তালা ঝুলিয়ে গোপনে কর্মকর্তারা পালিয়ে যান। পরে ঋণ নিতে আসা সদস্যরা ও স্থানীয় মাঠকর্মীরা অফিস বন্ধ দেখে কর্মকর্তাদের মোবাইলে যোগাযোগ করে নম্বর বন্ধ পান এবং পালিয়ে যাওয়ার কথা বুঝতে পারেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে ক্ষুব্ধ সদস্যরা স্থানীয় মাঠকর্মীদের ওপর চড়াও হন।
দুগাছিয়া এলাকার চা দোকানি মনির হোসেন এক লাখ টাকার জন্য ১০ হাজার টাকা জমা দিয়েছেন। একইভাবে পাঁচপাই বাজারের চা দোকানি হাবিব তিন লাখ টাকা ঋণের জন্য ৩০ হাজার টাকা, ছিপান গ্রামের ফরিয়া ধান ব্যবসায়ী কুদ্দুস ২০ হাজার টাকা, পাঁচপাই বাজারের মনিহারি ব্যবসায়ী নাজিম ৩০ হাজার টাকা, কৃষক শাহজাহান ১৫ হাজার টাকা, গৃহিণী খোদেজা ১০ হাজার টাকা, ষোলহাসিয়া এলাকার শীলা আক্তার ১৫ হাজার টাকা দিয়েছেন।
পাঁচপাই এলাকার গৃহবধূ খোদেজা (৫৫) বলেন, ‘এক লাখ ট্যাহা ঋণের লাইগ্যা কর্জ কইরা ১০ হাজার ট্যাহা দিছি। ‘
মাঠকর্মী জান্নাত বলেন, ‘খোঁজখবর না নিয়ে চাকরি নেওয়া আমাদের ভুল হয়েছে। মানুষের কাছ থেকে টাকা আদায় করে জমা দিয়েছি। কিন্তু অফিস বন্ধ করে তারা (কর্মকর্তারা) পালিয়ে যাওয়ার পর টাকার জন্য মানুষ আমাদের চাপ দিচ্ছেন। ‘
গফরগাঁও থানার ওসি ফারুক আহম্মেদ বলেন, ‘ঘটনা শুনেছি। এ ব্যাপারে কেউ বাদী হয়ে অভিযোগ করেনি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ‘