শেরপুরে চালক আব্দুর রাজ্জাককে (৩০) হত্যার পর অটোরিকশা ছিনতাইয়ের ঘটনায় সাগর (২৫) নামে এক যুবকের ৪২ বছর ও মিল্টন (২৪) নামে আরেক এক যুবকের ৯ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
বুধবার (৬ এপ্রিল) দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ আল মামুন জনাকীর্ণ আদালতে এ রায় ঘোষণা করেন।
সাগর শেরপুর সদর উপজেলার যোগিনীমুরা ডাকাতপাড়া এলাকার শাজাহান আলীর ছেলে ও মিল্টন শহরের দমদমা কালীগঞ্জ মহল্লার বাদশা মিয়ার ছেলে। একই মামলায় রেজুয়ান (২৪) নামে অপর এক আসামিকে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় খালাস দেওয়া হয়েছে। সাগর মামলার শুরু থেকেই পলাতক রয়েছেন।
রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) অ্যাডভোকেট চন্দন কুমার পাল।
তিনি বলেন, আসামি সাগরকে হত্যার দায়ে যাবজ্জীবন (৩০ বছর) এবং ১০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরও তিন মাস, ছিনতাইয়ের দায়ে সাত বছর এবং ৫ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরও এক মাস, আলামত গোপন করার দায়ে পাঁচ বছর কারাদণ্ড এবং ৩ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরও ১৫ দিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সব দণ্ডই একটির পর আরেকটি কার্যকর হবে। অন্যদিকে মিল্টনকে হত্যার দায় থেকে অব্যাহতি দিয়ে ছিনতাইয়ের দায়ে ছয় বছর তিন মাস এবং ৫ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরও এক মাস, আলামত গোপন করার দায়ে তিন বছর এবং ৩ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরও ১৫ দিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তার সাজা একইসঙ্গে কার্যকর হবে। একই সঙ্গে আগের ভোগকৃত হাজতবাসকাল ওই দণ্ড থেকে বাদ যাবে।
পিপি আরও জানান, মামলায় রেজুয়ান নামে অপর এক আসামি গ্রেফতার হয়ে জামিনে গেলেও সাগর শুরু থেকেই পলাতক থাকে। আর মিল্টন গ্রেফতারের পর থেকে কারাগারে রয়েছে।
আদালত সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের ৭ মার্চ সন্ধ্যায় ভাড়ায় নেওয়া একটি নতুন অটোরিকশা নিয়ে শেরপুর পৌর শহরের দমদমা কালীগঞ্জ এলাকা থেকে বের হন আব্দুর রাজ্জাক। বাড়িতে না ফেরায় খোঁজ নিতে গিয়ে তার ব্যবহৃত মোবাইলটি বন্ধ পায় পরিবারের লোকজন। খবর পেয়ে রাতেই থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে মিল্টনের বসতঘর থেকে রক্তাক্ত জামা-কাপড়, তার বাড়ির পাশের এক কবরস্থান থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় ছিনতাই হওয়া অটোরিকশা উদ্ধার করে এবং পরদিন ভোরে পার্শ্ববর্তী মোবারকপুর এলাকায় এক ইটভাটা থেকে ইট দিয়ে অর্ধঢাকা অবস্থায় আব্দুর রাজ্জাকের ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করে।
এ ঘটনায় রাজ্জাকের স্ত্রী সাজেদা বেগম বাদী হয়ে মিল্টন, সাগর ও রেজুয়ানকে আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। ওই মামলায় মিল্টন পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। একই বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর ওই তিনজনের বিরুদ্ধেই আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আনছার আলী। বিচারিক পর্যায়ে মামলার বাদী, চিকিৎসক, জবানবন্দি গ্রহণকারী ম্যাজিস্ট্রেটসহ ১৩ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য নেওয়া হয়।