টিভি চ্যানেলের সাংবাদিক বানিয়ে দেবার প্রলোভন দেখিয়ে প্রথমে দুই মাস আটকে রেখে তরুণীকে ধর্ষণ। তারপর অনেকটা বাধ্য হয়েই নিজের থেকে ৪৫ বছরের ছোট, রিবা আক্তার নামের সেই মেয়েকে বিয়ে করেন ষাটোর্ধ্ব আব্দুর রাজ্জাক। একদিকে স্ত্রীর মর্যাদা পেতে রিবার চাপ, অন্যদিকে ভাইয়ের সঙ্গে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে এক ঢিলে দুই পাখি মারার ফন্দি আঁটেন রাজ্জাক৷
স্ত্রীর চাপ থেকে মুক্তি আর সহোদর ভাই ও ভাজিতাকে হত্যা মামলায় ফাঁসাতে খুন করা হয় রিবাকে। ময়মনসিংহের ধোবাউড়ায় অজ্ঞাত তরুণীর মরদেহ উদ্ধারের পর তদন্তে বেরিয়ে আসে হত্যাকান্ডের এমন লোমহর্ষক ঘটনা। ঘটনার দুইদিন পর ডিবির জালে ধরা পড়েছে ঘাতক রাজ্জাক।
বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) দুপুরে জেলা পুলিশ সুপার মোহা. আহমার উজ্জামান এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, দুই মাস আগে গাজীপুরে আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে পরিচয় হয় গার্মেন্টসকর্মী রিবা আক্তারের। রিবা নরসিংদী জেলার মাধবপুর উপজেলার খিলগাঁও গ্রামের অটোচালক দুলাল মিয়ার মেয়ে। পরিচয়ের পর তাদের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে কথাবার্তা চলে, বাড়ে সখ্যতাও। একপর্যায়ে রিবাকে টিভি চ্যানেলের সাংবাদিক বানানোর প্রলোভন দেখিয়ে তাকে ব্যবহার এবং একপর্যায়ে বিয়ে করে। বিয়ের পর আব্দুর রাজ্জাকের গাজীপুরের গাছা রোড এলাকায় ভাড়া বাসায় যাতায়াত ছিল তরুণীর।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, গত ১৫ মার্চ ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার গোয়াতলা রাস্তার পাশ থেকে অজ্ঞাত তরুণীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই নারীর মরদেহের পাশে এক যুবকের জন্মনিবন্ধনের কাগজ পায় পুলিশ। পরে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে, জমিসংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে স্থানীয় সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মী পরিচয় দেওয়া আব্দুর রাজ্জাক নামে এক ব্যক্তি ভাতিজা ও ভাইকে ফাঁসাতে গাজীপুর থেকে রিবাকে ময়মনসিংহের ধোবাউড়া কংশ নদের পাশে ওড়না পেচিয়ে হত্যার পর মরদেহ ফেলে রাখে।
এরপর ভাতিজার জন্ম নিবন্ধনের কাগজ লাশের পাশে ফেলে রাখে রাজ্জাক। ওই জন্মনিবন্ধনের সূত্র ধরে যুবক শহিদুল্লাহকে আটকও করে পুলিশ। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। ঘটনার মূল হোতা আব্দুর রাজ্জাককে দুইদিন পর বুধবার (১৬ মার্চ) অভিযান চালিয়ে গাজীপুর থেকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশের সদস্যরা।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সফিকুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় আরও দুইজন জড়িত থাকার কথা জানিয়েছে ঘাতক রাজ্জাক। তাদেরকেও গ্রেপ্তার করতে ডিবির একাধিক টিম কাজ করছে।