ময়মনসিংহের নান্দাইলে জটিল কঠিন সর্বরোগের চিকিৎসার নামে ঝাড়ুপেটা ও ঝাড়ফুঁক দিয়ে সাধারণ মানুষকে প্রতারণা করছে এক কিশোর কবিরাজ। নারীদের সামনে বসিয়ে ওই কিশোর ঝাড়ফুঁক ও ঝাড়ুপেটা করে বলে জানা গেছে।
গত তিন মাস ধরে চলমান এই অপচিকিৎসার আড়ালে স্থানীয় একটি চক্র সক্রিয় হয়ে উঠছে। প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে কয়েক শতাধিক মানুষ এসে কথিত কবিরাজের নিদিষ্ট বাক্সে নগদ টাকা দিয়ে চিকিৎসা নিয়ে যাচ্ছে।
নান্দাইল উপজেলার বীর বেতাগৈর ইউনিয়নের বীরখামাটখালী গ্রামে জনৈক শফিকুল ইসলামের ১৪ বছর বয়সী কিশোর পুত্র হৃদয় মিয়া এ ধরনের চিকিৎসা করে আসছে। এই কিশোরকে সবাই হুজুর বলে সম্বোধন করছেন। হৃদয় মিয়ার পরিবার ও স্বজনদের দাবি জিনের মাধ্যমে এই কিশোর চিকিৎসা করছে।
সরেজমিন দেখা যায়, কিশোর কবিরাজের বাড়িতে অসংখ্য মানুষের ভিড়। কথিত কবিরাজ একটি চেয়ারে বসে আগত রোগী দেখছে। ওপর দিকে তাকিয়ে মুখে বিড়বিড় করে রোগীদের মাথায় হাত রেখে একটি ঝাড়ু দিয়ে শরীরে মৃদু ঝাড়ুপেটা করছে। ঝাড়ফুঁক দিচ্ছে রোগীদের আনা বোতলভর্তি পানি ও তেলে। তার পাশে রাখা কাঠের একটি বাক্সে নগদ টাকা-পয়সা দিয়ে যাচ্ছে রোগীরা যার যার মতো।
জানা যায়, সকাল-বিকাল পালা করে রোগী দেখে এই কিশোর। আগত রোগীর মধ্যে মহিলার সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি।
স্থানীয়রা জানান, এই কিশোর এক সময় নিখোঁজ হয়ে যেত মাঝে মধ্যে। ওই সময় তাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হতো।
কবিরাজ কিশোরের আব্দুল মজিদ নামে এক আত্মীয় জানান, কবিরাজির মাধ্যমে মানুষের সেবা করবে এই শর্তে তাকে জিনদের হাত থেকে ফেরত আনা হয়েছে।
এদিকে বাড়িতে অনেক রোগীর ভিড় থাকলেও কেউ চিকিৎসা নিয়ে ভালো হয়েছে প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে কবিরাজ কিশোরের আত্মীয়স্বজনরা মুখে মুখে বলছেন অনেক রোগী ভালো হয়েছে, কয়েকজনের দীর্ঘদিনের রোগব্যাধি সেরেছে।
উপজেলার চামটা গ্রামের শারীরিক ও বাকপ্রতিবন্ধী হাবিব মিয়ার (১০) অভিভাবক বলেন, ১৫ দিন ধরে হুজুরের কাছে আসছি। ঝাড়ুপেটা ও তেল-পানি পড়া দিয়েছেন হুজুর। তিনি বলেছেন, আগামী এক মাস আসলে অবস্থার উন্নতি হবে।
কিশোর কবিরাজ হৃদয় মিয়া জানায়, এসবে তার কোনো হাত নেই। তারা (জিন) সব করেন।
জানতে চাইলে নান্দাইল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহমুদুর রশিদ বলেন, এটা কুসংস্কার। সহজ-সরল মানুষদের এক ধরনের ধান্ধায় ফেলে প্রতারণা করা হচ্ছে।
নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবুল মনসুর সাংবাদিকদের জানান, কেউ অভিযোগ করলে বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ইউপি চেয়ারম্যান এবং স্থানীয় সাংসদ অনুমতি দিয়েছে দাবির বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল মতিনের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে, তিনি বলেন আমি কেন এসব কাজে অনুমিত দিব। আমি এসব কাজের কোন অনুমতি দেই নাই।