নেত্রকোনায় একটি জঙ্গল থেকে উদ্ধার হওয়া নবজাতককে এক মাস পর নতুন মায়ের কোলে তুলে দেওয়া হয়েছে। আজ রবিবার (৬ মার্চ) বিকেলে সদর উপজেলা শিশু কল্যাণ বোর্ড আনুষ্ঠানিকভাবে ওই নবজাতককে হস্তান্তর করেছে। নতুন মায়ের স্বীকৃতি পেয়েছেন নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার দশদার গ্রামের নিঃসন্তান গৃহিণী সেজি আক্তার। তিনি বারহাট্টার কেওয়ারাশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খায়রুল আমীনের স্ত্রী।
সদর উপজেলা শিশু কল্যাণ বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, নবজাতক ছেলেটির নাম রাখা হয় সামিন ইয়াসার সুবর্ণ। আজ থেকে ওই দম্পতি তার পিতা-মাতা ও বৈধ অভিভাবক হিসেবে শিশু সুবর্ণর লালন-পালন পড়াশোনাসহ যাবতীয় বিষয় দেখাশুনা করবেন। শিশু কল্যাণ বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুয়ায়ী শিক্ষক খায়রুল আমীন তাঁর পেনশনের এক তৃতীয়াংশ অর্থ, দ্বিতীয় তলাবিশিষ্ট বাড়ির একটি ইউনিট, এক একর (১০০ শতাংশ) ভূমি রেজিস্ট্রি দানপত্রমূলে সামিন ইয়াসার সুবর্ণর নামে হস্তান্তর করেছেন।
নেত্রকোনা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত নবজাতক হস্তান্তর অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নেত্রকোনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদা আক্তার। জেলা প্রশাসক কাজি মো. আবদুর রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে শিশু সুবর্ণকে তার নতুন মায়ের কোলে তুলে দেন। এ সময় পুলিশ সুপার মো. আকবর আলী মুন্সী বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়াও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তফসির উদ্দিন খান, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আহসান কবীর রিয়াদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
শিশুকে কোলে পেয়ে তার নতুন মা সেজি আক্তার আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন, ১৫ বছর ধরে একটি সন্তানের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি। সন্তানের পরশ পেয়ে আজ আমার মন শান্ত হয়েছে। আমি সবার কাছে সন্তানের জন্য দোয়া চাই।
পিতার দায়িত্ব পেয়ে শিক্ষক খায়রুল আমীন বলেন, সন্তান পাওয়ার আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। তাকে যেন ভালো মানুষ ও সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে পারি এ জন্য সবার কাছে দোয়া কামনা করছি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আহসান কবীর রিয়াদ বলেন, বর্তমানে শিশুটি সম্পূর্ণ সুস্থ আছে। খাবার খেতেও তার কোনো সমস্যা হয় না।
নেত্রকোনার পুলিশ সুপার মো. আকবর আলী মুন্সী বলেন, একজন ভালো মানুষের হাতে সুর্বণকে তুলে দেওয়া হয়েছে। নতুন বাবা-মায়ের কাছে সে ভালো থাকবে এটাই কামনা করি।
জেলা প্রশাসক মো. কাজি আবদুর রহমান বলেন, সুবর্ণ যোগ্য পিতা-মাতা পেয়েছে। আর তার পিতা-মাতাও আজ থেকে বুক ভরে সন্তানের স্পর্শ উপভোগ করতে পারবেন। তাঁরা সবাই ভালো থাকুক এটাই আমার প্রত্যাশা।
প্রসঙ্গত, নেত্রকোনা পৌরসভার নাগড়া সওদাগর পাড়ার একটি জঙ্গলে গত ৭ ফেব্রুয়ারি ভোরে ওই নবজাতকের কান্না শুনে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেন। পরে পুলিশ নবজাতককে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। তখন থেকেই ওই নবজাতক নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের স্পেশাল কেয়ার অব নিউনেটাল ইউনিটের (স্ক্যানো) সেবিকাদের তত্ত্বাবধানে ছিল। তারা মায়ের আদরে এক মাস ধরে লালন-পালন করেছেন শিশুটিকে। এর মধ্যে ৯টি পরিবার শিশুটিকে দত্তক নিতে আবেদন করেন। পরে সদর উপজেলা শিশু কল্যাণ বোর্ড যাচাই-বাছাই করে খায়রুল আমীন দম্পতিকে শিশুর নতুন বাবা-মা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।