চিরকুট ছাড়াও নিজের ফেসবুক আইডিতে ভিডিও আপলোড ও স্ট্যাটাসে লিখে নিজের মৃত্যুর জন্য ঈশ্বরগঞ্জ পৌরসভার এক কাউন্সিলরসহ আরো চারজনকে দায়ী করে ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহনন করেছেন এক সোনা ব্যবসায়ী। তিনি ছয় দিন ধরে নিখোঁজ ছিলেন।
জাহাঙ্গীর আলম (৩৮) নামে নিহত ওই ব্যবসায়ী ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ পৌরসভার কাঁকনহাটি এলাকার মৃত লাল মিয়ার ছেলে। তিনি ময়মনসিংহ শহরের একটি আবাসিক হোটেলে গতকাল শনিবার গভীর রাতে বা আজ রবিবার ভোরে কোনো একসময় আত্মহত্যা করেন।
খবর পেয়ে পুলিশ ওই হোটেলের একটি কক্ষের দরজা ভেঙে লাশ উদ্ধার করে। ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার চরহোসেনপুর এলাকার এসবি মার্কেটে ‘আপন জুয়েলার্স’ নামে তাঁর একটি জুয়েলারি দোকান আছে। তিনি নিজেও একজন গয়নার কারিগর ছিলেন।
স্থানীয় সূত্র, পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে মোবাইল বন্ধ করে নিখোঁজ ছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। তাঁকে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও পাওয়া যায়নি। এর মধ্যে রবিবার গভীর রাত থেকে তাঁর ফেসবুক আইডিতে ঈশ্বরগঞ্জ পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাইফুর রহমান ভুইয়া রাসেলসহ মিলন মিয়া, সুজন মিয়া, অন্তর মিয়া ও কাঞ্চন মিয়ার নাম উল্লেখ করে লেখা আছে তাঁর মৃত্যুর জন্য এরাই দায়ী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন স্ট্যাটাসের পরপরই পরিবার ও পরিচিত লোকজন তাঁর খোঁজ করতে থাকে। এ অবস্থায় রবিবার ভোরে খবর আসে ময়মনসিংহ শহরের চরপাড়া এলাকার হিল্টন আবাসিক হোটেলের একটি কক্ষে তাঁর ঝুলন্ত লাশ রয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ দরজা ভেঙে লাশ উদ্ধার করে।
কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক মানিকুল ইসলাম জানান, জাহাঙ্গীর মৃত্যুর আগে বেশ কয়েকজনকে দায়ী করে একটি চিরকুট লিখে গেছেন। বিষয়টি যাচাই-বাছাই করা হবে।
মৃত্যুর জন্য দায়ী করা কাউন্সিলর সাইফুর রহমান ভুইয়া রাসেল বলেন, জাহাঙ্গীর তাঁর মার্কেটে দোকান ভাড়া নিয়ে জুয়েলারি ব্যবসা করতেন। তাঁর কাছে অনেকের টাকা পাওনা ছিল। মিলন নামের এক ব্যক্তি জাহাঙ্গীরের কাছে ৯৪ হাজার টাকা পেতেন। সেই টাকার জিম্মাদার ছিলেন তিনি। সময়মতো টাকা পরিশোধ না করে জাহাঙ্গীর উধাও হয়ে যান। পরে বিভিন্ন ব্যক্তির ফেসবুক মেসেঞ্জারে ভিডিও বার্তা পাঠিয়ে আমাকে দোষারূপ করেন। এ ধরনের একটি ভিডিও তাঁর নজরে এলে তিনি গতকাল শনিবার থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল কাদের মিয়া জিডি হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
নিহত জাহাঙ্গীরের ছোট ভাই আঙ্গুর মিয়া জানান, তাঁর ভাই বেশ কিছুদিন ধরে বিমর্ষ ছিলেন। এর মধ্যে কাউকে কিছু না বলেই নিখোঁজ হয়ে যান। পরে খোঁজাখুঁজি করেও সন্ধান পাওয়া যায়নি। মোবাইলও বন্ধ ছিল। এর মধ্যে রবিবার সকালে ভাই জাহাঙ্গীরের ফোন থেকে তাঁর নম্বরে ফোন এলে বলা হয় এই নম্বরের মালিক ময়মনসিংহ শহরের একটি হোটেলে সুইসাইড করেছেন।