দেশের বৃহৎ ইউরিয়া উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার তারাকান্দিস্থ যমুনা সার কারখানায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় হামলা, ভাঙচুর ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে থেকে বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুর পর্যন্ত ঘটনায় পুলিশ, সংবাদকর্মী ও উভয় পক্ষে আহত হন অন্তত ৩০ জন। এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, যমুনা সার কারখানা নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও তারাকান্দি ট্রাক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল আলম মানিক এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ট্রাক মালিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রফিকের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল।
কারখানার শ্রমিক-কমর্চারী ইউনিয়নের (সিবিএ) নির্বাচন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার বিকেলে সাধারণ সভা আহ্বান করা হয়। এর আগেই এলাকা নিয়ন্ত্রণে নিতে মশিউর রহমান মোর্শেদের নেতৃত্বে রফিকুল ইসলামের লোকজন বুধবার বিকেলে তারাকান্দি শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে অবস্থান নেয়। এ সময় তারা আশরাফুল আলম মানিক গ্রুপের যুবলীগকর্মী খোকন মিয়াকে (৩৫) বেধড়ক পেটায়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় উত্তেজনার সৃষ্টি হয় এবং মানিকের লোকজন জড়ো হয়ে রফিক গ্রুপের কামরুজ্জামানকে (৪০) হাতুড়ি দিয়ে পেটানো হয়। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। পরে খোকন ও কামরুজ্জামানকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সন্ধ্যায় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।
এদিকে রাত থেকে রফিকের লোকজন পুনরায় অবস্থান নিলে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে উভয় পক্ষ ফের সংঘর্ষে জড়ায়। পাল্টাপাল্টি হামলা, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপে এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে। এ সময় এসআই ফয়জুর রহমান, এসআই সোহাগ এএসআই আবু শামা, সংবাদকর্মী রাইসুল ইসলা ও সোহেল রানা আহত হন। এ ছাড়া স্থানীয় আনিসুর রহমান (৪০), সাইফুল ইসলাম (৩২), মো. মণ্ডল (২৫), শফিকুল ইসলাম (৩০), মিন্টু মিয়াসহ (৩০) উভয় পক্ষে অন্তত ৩০ জন আহত হন।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি (শুক্রবার) সকালে সার কারখানা নিয়ন্ত্রণে নিতে রফিক গ্রুপের ক্যাডার মশিউর রহমান মোর্শেদের নেতৃত্বে তারাকান্দি পুলিশ তদন্তকেন্দ্রে হামলা ও ৬ পুলিশ আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় থানায় মামলা ও মোর্শেদ জেলহাজতে গেলেও সম্প্রতি সে জামিনে আসে এবং এলাকায় নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।
কারখানার শ্রমিক-কমর্চারী ইউনিয়নের (সিবিএ) সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান জানান, আসন্ন সিবিএ নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে একটি পক্ষ এলাকায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। প্রশাসন কঠোর না হলে নির্বাচনে বড় ধরনের সহিংসতার আশঙ্কা রয়েছে বলে তাঁর দাবি।
তারাকান্দি ট্রাক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল আলম মানিক অভিযোগ করেন, সিবিএ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রফিকুল ইসলাম প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। বিএনপি থেকে আসা তার ক্যাডার মোর্শেদকে দিয়ে এলাকায় হামলা ও ভীতি সঞ্চার করায় বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জানান, সার কারখানার পরিবহন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাবেক প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান এমপির লোকজন সাধারণ শ্রমিকদের মারধর করে। শ্রমিকরা পরিবহন বন্ধ করে দেওয়ায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। তার লোকদের ওপর গুলিবর্ষণ করায় কয়েকজনকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনা ভিন্ন খাতে নিতে তার লোকজনকে দায়ী করা হচ্ছে বলেও পাল্টা অভিযোগ করেন।
জামালপুরের সদর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মো. জাকির হোসেন সুমন জানান, যমুনা সার কারখানার সিবিএর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে। এতে কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন। ঘটনার সঙ্গে জড়িত উভয় পক্ষের ছয়জনকে আটক করা হয়েছে। বর্তমানে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে।