জামালপুরে করোনার সংক্রমণ আবারো উর্ধ্বমুখী। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ২১৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৩৯ জনের করোনা পজিটিভ হয়েছে। তাদের মধ্যে জামালপুর নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কলেজের ৩০ জন নারী শিক্ষার্থীর করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। জেলায় একদিনে করোনার সংক্রমণের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ দশমিক ৯৭, যা চলতি মাসের সর্বোচ্চ সংক্রমণ।
আজ বৃহস্পতিবার সিভিল সার্জন কার্যালয়, ২৫০ শয্যার জামালপুর সদর হাসপাতাল ও নার্সিং কলেজ কর্তৃপক্ষ এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, জামালপুর জেলায় গত ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত করোনা শনাক্ত শূন্যের কোঠায় ছিল। চলতি বছরের জানুয়ারির শুরু থেকে এ জেলায় করোনার সংক্রমণ ফের ঊর্ধ্বমুখি হয়েছে। গত ১৭ জানুয়ারি ৯৯টি নমুনা পরীক্ষায় করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয় ১২ জন। এরপর বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ২১৭টি নমুনা পরীক্ষায় চলতি মাসে রেকর্ড সর্বোচ্চ ৩৯ জনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়। এতে জেলায় করোনা শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ১৭ দশমিক ৯৭। নতুন করে করোনায় আক্রান্ত এই ৩৯ জনের মধ্যে মেলান্দহ উপজেলায় একজন এবং বাকি ৩৮ জনই জামালপুর সদর উপজেলার বাসিন্দা। সদর উপজেলায় করোনা পজিটিভ রোগীদের মধ্যে জামালপুর নার্সিং কলেজের ৩০ জন, র্যাব অফিসের দুজন, কাছারিপাড়ায় দুজন এবং জামালপুর শহরের পুলিশ লাইন্স, পাঁচরাস্তা, বজরাপুর, বোসপাড়া ও কেন্দুয়া ইউনিয়নে একজন করে করোনা পজিটিভ রোগী শনাক্ত হয়েছেন।
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় নার্সিং কলেজের তিনটি শিক্ষাবর্ষের ১৭৩ জন নারী শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৩৪ জনের নমুনা পরীক্ষায় একযোগে ৩০ জনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হওয়ায় কার্যরত কলেজটির একাডেমিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। কলেজটির প্রশিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা যারা এখনো করোনায় আক্রান্ত হননি তারাও ঝুঁকিতে রয়েছেন।
বৃহস্পতিবার সকালে এই কলেজের আরো ৩৯ জন শিক্ষার্থীর করোনার নমুনা পরীক্ষা করতে দেওয়া হয়েছে। নার্সিং কলেজের আবাসিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে করোনা সংক্রমণ মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়ায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় করোনায় আক্রান্ত ৩০ জন শিক্ষার্থীকে আবাসিক কক্ষ থেকে প্রত্যেকের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা জামালপুর, শেরপুর, ময়মনিসংহ, টাঙ্গাইল, রংপুরসহ বিভিন্ন জেলার বাসিন্দা। করোনা পজিটিভ হলেও সামান্য উপসর্গ ছাড়া তারা সবাই সুস্থ আছে। তারা নিজ নিজ বাড়িতেই আইসোলেশনে থাকবে বলে জানিয়েছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, এই নার্সিং কলেজের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা একাডেমিক ক্লাসের পাশাপাশি জামালপুর সদর হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা পালাক্রমে ক্লিনিক্যাল দায়িত্ব পালন করেন। হাসপাতালের ওয়ার্ড থেকেই তারা সংক্রমিত হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। নার্সিং শিক্ষার্থীদের মাঝে করোনা ছড়িয়ে পড়ায় আপাতত সদর হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল দায়িত্ব পালন থেকে তাদেরকে বিরত রাখা হয়েছে।
জামালপুর নার্সিং কলেজের ইনচার্জ রানী রহমান বলেন, কয়েকদিন ধরেই কলেজের বেশ কয়েক শিক্ষার্থীর করোনার উপসর্গ দেখা দেয়। তাদের নমুনা পরীক্ষা করতে দিলে ৩০ জনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়। এই কলেজে শিক্ষার্থীদের আবাসিক সঙ্কট রয়েছে। এখানে শিক্ষার্থীদের গাদাগাদি করে থাকতে হয়। তাই করোনায় আক্রান্ত শিক্ষার্থীদের এই ভবনে আইনোলেশন পালন করা সম্ভব নয়। তাছাড়া আক্রান্তরা সবাই ভালো আছে। তাদের প্রত্যেকের অভিভাবকদের সাথে যোগাযোগ করে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা বাড়িতেই আইসোলেশনে থাকবে। এ নিয়ে কলেজের বাকিদের মাঝেও করোনার সংক্রমণের ঝুঁকি বিরাজ করছে।
নার্সিং কলেজের তদারকির অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা জামালপুর সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান বলেন, নার্সিং কলেজের করোনায় আক্রান্ত শিক্ষার্থীদের ছুটি দিয়ে বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। তারা বাড়িতেই আইসোলেশনে থাকবে। এক সপ্তাহের জন্য তাদের একাডেমিক ক্লাস ও হাসপাতালের ওয়ার্ডে ক্লিনিক্যাল দায়িত্ব পালন স্থগিত করা হয়েছে। কলেজটির আবাসিক অন্যান্য শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিজ নিজ কক্ষে অবস্থান করতে বলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
তিনি আরো জানান, জামালপুর জেলায় করোনার সংক্রমণ আবারো ঊর্ধ্বমুখী। তবে আক্রান্তদের মধ্যে সিংগভাগই বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হচ্ছে না। বর্তমানে সদর হাসপাতালের করোনা কেবিন ইউনিটে এই হাসপাতালের দু’জন সিনিয়র স্টাফ নার্সসহ চারজন রোগী ভর্তি আছেন। রোগী আরো বাড়লে তাদের চিকিৎসার জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি নেওয়া আছে।