দীর্ঘদিন ধরে অচলাবস্থায় পড়ে রয়েছে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলা বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনন্স কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) অফিস। এই সেবামূলক প্রতিষ্ঠানটি নানা সমস্যা ও সংকটে জর্জরিত।
উপজেলা বিটিসিএল অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০০৪ সালে এ উপজেলায় বিটিসিএলকে ডিজিটালে রূপান্তরিত করা হয়। ৫১২টি টেলিফোন সংযোগের সক্ষমতা সম্পন্ন এ অফিসটি প্রথমে ৩৪৫টি লাইন সংযোগ দেয়া হয়। পরে বকেয়া বিল ও গ্রাহকের অনীহার কারণে ২০১৮ সালের আগ পর্যন্ত ১৩৭টি লাইন চালু ছিলো। কিন্তু জনবল সংকটের কারণে ও ক্যাবলগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় ১৩৭টি টেলিফোন সংযোগের সব ক’টিই বিচ্ছিন্ন অবস্থায় পড়ে আছে অনেক দিন ধরে।
কয়েকজন গ্রাহক জানান, দীর্ঘদিন থেকে তাদের টেলিফোন লাইন অচল হয়ে পড়ে রয়েছে। বহুবার জানানোর পরও মেরামত করা হচ্ছে না। সরকারি-বেসরকারি অফিস ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসমূহে টেলিফোনের ব্যবহার নেই বললেই চলে। মুঠোফোন চালুর পর থেকে টেলিফোনের ব্যবহার কমতে কমতে শূন্যের কোঠায় এসে দাঁড়িয়েছে।
সরেজমিনে জানা গেছে, একজন ইনচার্জ ব্যতীত ওই অফিসে নেই কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী। জরাজীর্ণ দোতলা অফিস ভবনটি এখন ইনচার্জের কোচিং সেন্টার। অফিসে কাজ না থাকায় আশ-পাশের গরীব স্কুল শিক্ষার্থীদের পড়াচ্ছেন বলে জানান ইনচার্জ। এদিকে গত ৪ বছরের অধিক সময় ধরে বিচ্ছিন্ন রয়েছে উপজেলার পৌর শহরের টেলিযোগাযোগ।
উপজেলার বিটিসিএল অফিসের মেশিনারিজ যন্ত্রপাতি, সুইচ রুম, দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করায় অফিস ভবনটিও জরাজীর্ণ আকার ধারণ করেছে। অফিসের সামনে অভিযোগ গ্রহণের জন্য নেই কোন “অভিযোগ বক্স”। অফিসের নিচতলার একটি কক্ষে প্রায় ১০-১২ জন স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীকে পড়াচ্ছেন অফিসের ইনচার্জ সজিব আহমেদ। অফিসে শিক্ষার্থীদের কেনো পড়াচ্ছেন এমন প্রশ্নে তিনি জানান, কাজ নেই, বসেই থাকি, তাই গরীব শিক্ষার্থীদের পড়াচ্ছি।
অফিসের দোতলায় উঠার সিড়ির নিচে ভাঙা ইট ও আবর্জনা স্তূপ হয়ে পড়ে আছে অনেকদিন ধরে। দোতলায় একটি বড় বেঞ্চ রয়েছে। তাতে খর দিয়ে বিছানা পেতে রাখা হয়েছে। রাতে অফিসের নৈশ প্রহরী থাকে। তবে নৈশ প্রহরী অফিসের কেউ না, ব্যক্তিগত বলে অফিসের ইনচার্জ জানান।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নির্মাণের পর থেকে আজ অবধি একবারও রঙ ও চুনকামের কাজ করতে দেখা যায়নি এই ভবনটিতে। কোনো ধরনের সংস্কার কাজ চোখে পড়েনি। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে এখানে বেশি একটা আসতে দেখা যায় না। যন্ত্রপাতি, সরঞ্জাম নষ্ট অবস্থাতেই পড়ে আছে দীর্ঘদিন ধরে, তবুও মেরামত করা হয় না।
অফিসের ইনচার্জ সজিব আহমেদ বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে এখানে আছি। অফিসে আর কোনো লোকজন না থাকায় আপাতত আমিই সব দেখাশোনা করছি। মাটির নিচ দিয়ে ছড়ানো সংযোগের তার রাস্তা মেরামত ও পৌরসভার ড্রেন নির্মাণের ফলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি না থাকায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার স্থান খুঁজে পেতে সময় লেগে যায়। জনবল কম হওয়ায় তাকে একা এসব কাজ করতে হয়। জনবল বাড়ালে ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি বাড়ালে দ্রুত মেরামত কাজ সম্ভব।
নালিতাবাড়ী প্রেসক্লাবের সভাপতি এমএ হাকাম হীরা বলেন, আমরা আগে এই অফিসে এসে টেলিফোন করতাম। বর্তমানে মোবাইলের প্রচলন হওয়ায় টেলিফোনের ব্যবহার কমে গেছে। তবে টেলিফোন অফিসটি সচল করা দরকার।
নালিতাবাড়ী উপজেলা কৃষি অফিসার আলমগীর কবীর বলেন, আমি এ উপজেলায় যোগদানের পর প্রায় ১০ হাজার টাকা খরচ করে মাত্র একদিনের জন্য কানেকশন পেয়েছিলাম। এরপর থেকে আমাদের অফিসের টেলিফোনটি অনেক দিন ধরেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় পড়ে আছে। বিটিসিএল অফিস থেকেও কোনো খোঁজ নেওয়া হয় না। তাদের ফোন দিলেও কোন সারা পাওয়া যায় না। শুধু মাসিক বিল চায়। বিষয়টি নিয়ে আমি সমন্বয় মিটিংয়ে কথাও বলেছিলাম।
এ ব্যাপারে বিটিসিএল এর দায়িত্বে থাকা সহকারী প্রকৌশলী বিল্লাল হোসেন বলেন, নালিতাবাড়ীর বিটিসিএল এর ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। বিকল টেলিফোন সংযোগ সচল করতে ও বিচ্ছিন্ন সংযোগ মেরামতের কাজ খুব তারাতারি শুরু হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।