২৫০ শয্যার জামালপুর সদর হাসপাতালের দুটি মেডিসিন ওয়ার্ডে করোনার উপসর্গ নিয়ে ভর্তি থাকা রোগীদের মধ্যে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের মধ্যে একজন নারী রয়েছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১২টার পর থেকে আজ শুক্রবার সকাল পর্যন্ত তাঁরা মারা যান। সংক্রমণ ও মৃত্যু শূন্যের কোঠায় নেমে আসা জামালপুর জেলায় করোনার রোগীও শনাক্ত হচ্ছে প্রতিদিন দু-একজন করে। একই সঙ্গে হাসপাতালে করোনার উপসর্গ নিয়ে ভর্তি রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। করোনার রোগী শনাক্ত নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ঝিমিয়ে থাকার মুহূর্তে এক রাতে ছয়জনের মৃত্যুর বিষয়টি উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, জামালপুর সদর হাসপাতালের পুরুষ ও নারী মেডিসিন ওয়ার্ডে করোনার উপসর্গ নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১২টার পর থেকে আজ শুক্রবার ভোর সাড়ে ৭টা পর্যন্ত ছয়জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের মধ্যে পাঁচজন পুরুষ ও একজন নারী।
পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডে মৃত ব্যক্তিরা হলেন জামালপুর সদরের আড়ংহাটি গ্রামের উসমান আলীর ছেলে মিশু (৫০), ৫ নম্বর চর এলাকার মৃত সাফাত আলীর ছেলে ফুলু শেখ (৭৫) ও জামালপুর শহরের দেওয়ানপাড়া এলাকার মৃত হাসমত আলীর ছেলে আব্দুস সামাদ (৬০), সরিষাবাড়ী উপজেলার চকবাঙালি গ্রামের বয়াত আলীর ছেলে লিজান মিয়া (৪৫) এবং মেলান্দহ উপজেলার রূপসীহাটা গ্রামের রমেজ উদ্দিনের ছেলে মানিক মিয়া (২৫)। নারী মেডিসিন ওয়ার্ডে মেহেরুন (৫০) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। তাঁর বাড়ি সদরের পোড়াবাড়ী এলাকায়। জ্বর, শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথাসহ করোনার বিভিন্ন উপসর্গ নিয়ে তাঁরা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।
এক রাতে ছয়জনের মৃত্যুর ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে হাসপাতালের দুটি মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা নারী-পুরুষ রোগী ও রোগীর স্বজনদের মাঝে উৎকণ্ঠা দেখা দেয়। সারা দেশে করোনার সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি বিস্তারের রেশ ধরে জামালপুর সদর হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে করোনার উপসর্গ নিয়ে রোগীর সংখ্যা গত সাত দিনে বেশ বেড়েছে। আজ শুক্রবার দুপুর ২টা পর্যন্ত পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডে ৭৮ জন এবং মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে ৪৭ জন রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছে। তাদের মধ্যে অধিকাংশ রোগীর শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, তলপেটে ব্যথা, হার্টের সমস্যাসহ করোনার নানা উপসর্গ রয়েছে।
জামালপুরে টানা কয়েক মাস করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার শূন্যের কোঠায় ছিল। ফলে করোনা সংক্রমণ রোধে জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্যবিভাগে অতটা তোড়জোড় ছিল না। গত ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে নমুনা পরীক্ষায় প্রতিদিন দু-একটি করে করোনা পজিটিভ রোগী শনাক্ত হচ্ছে। গত সাত দিনে ১১৯টি নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হয়েছে আটজনের। জামালপুর সদর হাসপাতালের চারতলায় করোনার কেবিন ওয়ার্ডে বর্তমানে কোনো রোগী ভর্তি নেই।
আজ শুক্রবার দুপুরে সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, করোনার কেবিন ওয়ার্ডে তালা ঝুলছে। সেখানে দায়িত্বরত কোনো চিকিৎসক বা নার্সদের পাওয়া যায়নি। গত বছর মহামারির সময় চালু করা পাশের করোনা ওয়ার্ডটিকে পূর্বের সেই ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রূপান্তরিত করা হয়েছে। সারা দেশে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি পরিস্থিতি বিরাজ করলেও জেলায় করোনা সংক্রমণ রোধে ও আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় নতুন করে কোনো কার্যক্রম এখনো শুরু করা হয়নি। শুরুতেই প্রস্তুতি না নিলে করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চরম দুর্ভোগে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।
এক রাতে ছয়জনের মৃত্যু ও করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাবেসার প্রস্তুতিতে ঘাটতির বিষয়ে জামালপুর সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘গত রাতে দুটি মেডিসিন ওয়ার্ডে বিভিন্ন উপসর্গ ও রোগে আক্রান্ত হয়ে ছয়জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে শুনেছি। তবে তারা করোনায় মারা যায়নি। মেডিসিন ওয়ার্ডের জটিল রোগীদের করোনার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় রোগী ও রোগীর লোকজনরা করোনার নমুনা দিতে চান না। তবে এখন থেকে করোনার উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হওয়া রোগীদের নমুনা পরীক্ষার ব্যাপারে জোর দেওয়া হবে। ‘
বর্তমানে হাসপাতালের চারতলায় করোনা কেবিন ওয়ার্ডটি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তবে সেখানে করোনার রোগী ভর্তি নেই। করোনার রোগীর চাপ বাড়তে থাকলে ডায়রিয়া ওয়ার্ডটি সরিয়ে পুনরায় সেখানে করোনার ওয়ার্ড হিসেবে রোগী ভর্তি ও চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু করা হবে।