প্রায় দেড় মাস ধরে একটি ঘুপচি ঘরে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয় অভি মিয়াকে (২৫)। পরিবারের অভিযোগ, তিনি ছাড়া পেলেই চুরি করেন। এদিকে বেঁধে রাখা হলেও ঠিকমতো খাবার দেওয়া হয়নি তাঁকে। দিনের পর দিন না খেতে পেয়ে কঙ্কালসার হয়ে পড়েন তিনি। গতকাল শুক্রবার দরজা খুলে দেখা যায়, তিনি মরে পড়ে আছেন। এ ঘটনা ঘটেছে কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার সরিষাপুর গ্রামে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, পিতা রেলওয়ে পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত সদস্য মো. অহিদ মিয়া (৬০) ও সৎ মা নারগীস বেগম (২৮) অভিকে ঠিকমতো খাবার দেননি। এভাবে তালাবদ্ধ করে ফেলে রাখলেও অভির চিকিৎসার ব্যবস্থা করেননি তাঁরা।
গতকাল বিকেলে অভির মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ জানায়, আজ শনিবার কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ময়নাতদন্ত করা হবে। এ খবর পেয়েও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সরেজমিন পরিদর্শনে না যাওয়ায় এলাকায় সমালোচনার ঝড় বইছে।
বাজিতপুর থানার ওসি মো. মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘অভিকে খাবার খেতে না দিয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভি অবহেলা ও তাচ্ছিল্যজনিত মৃত্যুর শিকার হলে এর দায় বর্তাবে পরিবারের ওপর। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে।’
অকালমৃত্যুর শিকার অভি মো. অহিদ মিয়ার দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তান। অভির মায়ের সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর তিনি লাপাত্তা। নারগীস বেগম মো. অহিদ মিয়ার তৃতীয় স্ত্রী।
অমানবিক এ মৃত্যুর ঘটনার খবর পেয়ে শত শত নারী-পুরুষ অভির লাশ দেখতে ওই বাড়িতে ভিড় করে। ঘুপচি ঘরটায় থাকা চৌকিতে যেন অভির মৃতদেহ মিশে আছে। গ্রামবাসীরা জানায়, অভি চুরিচামারি করতেন। কোনো একটা অপরাধ ঘটিয়েই তিনি গ্রাম ছেড়ে চলে যেতেন। আবার কিছুদিন পর এসে হাজির হতেন।
প্রায় দেড় মাস আগে ‘নিখোঁজ’ অভি আহত অবস্থায় বাড়ি এসে হাজির হলে তাঁর বাবা ঘরের বারান্দার একচালা কোঠায় অভিকে শিকলবন্দি করে তালা লাগিয়ে রাখেন। গ্রামবাসী অভিযোগ করে, এরপর নিয়মিত তাঁকে খাবার দেননি সত্মা।
প্রত্যক্ষদর্শী এক নারী জানান, দিনের পর দিন অভির ঘরের দরজাটাও খোলা হয়নি। এক বৃদ্ধা বলেন, ‘বাইন্ধা রাখছিন, দুষ আছিন না, খাওন দিত! না খাওয়াইয়া ছেরাডারে হেরা মাইরা লাইল।’
অভির পিতা মো. অহিদ মিয়া জানান, অতিষ্ঠ হয়েই তিনি ছেলেকে তালাবদ্ধ করে রেখেছিলেন। ঠিকমতো খাবার না দেওয়ার অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘অভি খেতে পারত না।’ অভির সৎ মা নারগীস বেগমও একই কথা বলেন।