চতুর্থ ধাপে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার আটটি, ভূঞাপুর উপজেলার ছয়টি এবং ঘাটাইল উপজেলার সাতটিসহ মোট ২১টি ইউনিয়ন পরিষদে আগামীকাল রবিবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইউনিয়নগুলোয় মোট ২১৫টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ১৪৫টি কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ বা গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে কর্তৃপক্ষ। ভোটা দেবেন পাঁচ লাখেরও বেশি ভোটার। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এ এইচ এম কামরুল হাসান।
এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ঘাটাইলের আনেহলা ও লোকেরপাড়া, ভূঞাপুরের নিকরাইল ও গোবিন্দাসী এবং সদর উপজেলার হুগড়াতে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। প্রার্থীরা থানা এবং নির্বাচন অফিসে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছেন। অনেকেই সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
টাঙ্গাইল সদর উপজেলায় নৌকার প্রার্থীদের সাথে ভোটযুদ্ধ হবে কোথাও স্বতন্ত্র নামে থাকা আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীদের। আবার কোথাও বিএনপি ঘরানার প্রার্থীর সাথে। জাতীয় পার্টি এবং ইসলামী শাসনতন্ত্র বাংলাদেশের প্রার্থীও রয়েছেন। এতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা রয়েছেন চাপে।
জানা যায়, দাইন্যা ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আফজাল হোসেন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান চেয়ারম্যান লাভলু মিয়া (আনারস), জাতীয় পার্টির জাকির হোসেন, স্বতন্ত্র আজহারুল ইসলাম সায়েম।
হুগড়া ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জাল হোসেন তোফা। তিনি বর্তমান চেয়ারম্যান। নৌকার সাথে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে পুলিশের আলোচিত এসি আকরামের ছেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী নুর ই আলম তুহিনের (মোটরসাইকেল) সাথে। এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন আব্দুল মান্নান খান, মোহাম্মদ আবুল হাশেম, মাসুম ফেরদৌস, মোরশেদ আলম দুলাল ও শামীম আল মামুন জুয়েল।
ঘারিন্দা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমেদ। এখানে একমাত্র স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল হোসেন সরকার (আনারস) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
বাঘিল ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন ইউনিয়নের সভাপতি এস এম মতিয়ার রহমান। আওয়ামী লীগের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আবু জাফর (মোটরসাইকেল) ও বর্তমান চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম সোহাগের (আনারস) সাথে। ইসলামী শাসনতন্ত্র বাংলাদেশের আরিফুর রহমান, জাতীয় পার্টির ইউসুফ আল মামুন, তরীকত ফেডারেশনের জুলহাস উদ্দিন ও রকিবুল ইসলাম সোহাগ স্বতন্ত্র।
করটিয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান খালেকুজ্জামান চৌধুরী মজনু। এখানে ভোটযুদ্ধ হবে বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ জাদিদুল হক (মোটরসাইকেল)।
পোড়াবাড়ী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফজলুজ্জামান রশিদ। এ ছাড়া জাতীয় পার্টির আফজাল হোসেন জয়নাল। স্বতন্ত্র রয়েছেন জাহিদ হাসান জাহাঙ্গীর (অটোরিকশা), মিজানুর রহমান, শাহাদত হোসেন, হালিম মিয়া, শরিফুর রহমান।
গালা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাজকুমার সরকার। মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে স্বতন্ত্র প্রার্থী নজরুল ইসলাম খানের (মোটরসাইকেল) সাথে। এ ছাড়া ইসলামী শাসনতন্ত্র বাংলাদেশের কামাল হোসেন রয়েছেন।
মগড়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান আজহারুল ইসলাম। বিদ্রোহী প্রার্থী উপজেলা যুবলীগের সহসভাপতি শফিকুল ইসলাম বুলবুল, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক কামাল হোসেন, উপজেলা আওয়ামী লীগ সদস্য মোতালিব হোসেন, ইসলামী শাসনতন্ত্র বাংলাদেশের আলমগীর হোসেন, জাতীয় পার্টির আব্দুল বাছেত মন্ডল।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজহারুল ইসলাম ও কামাল হোসেন আপন দুই ভাই। তাঁদের নিয়ে এলাকায় চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।
হুগড়া ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী নুর ই আলম তুহিন অভিযোগ করে বলেন, বর্তমান চেয়ারম্যান তোফা নির্বাচনী প্রচারণা এবং কর্মীদের ওপর হামলা করছেন। নির্বাচন অফিস ও থানায় অভিযোগ দিয়েছি। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি করছি।
নৌকার প্রার্থী তোফাজ্জাল হোসেন তোফা বলেন, ‘ইউনিয়নের প্রতিটি মানুষকে সেবা দিয়েছি। মানুষ উন্নয়নের পক্ষেই ভোট দেবে। তুহিনের কর্মী-সমর্থকরাই আমার নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করেছে।’
এদিকে মনোনয়ন ও নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একাধিক ইউনিয়নে স্থানীয় নেতাকর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। অনেকেই গোপনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন বলেছেন, প্রার্থী যোগ্য না হওয়ায় অনেক স্থানে বিদ্রোহী দাঁড়িয়েছেন।
সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আমিরুল ইসলাম খান জানান, নৌকার বিপক্ষে বিদ্রোহী প্রার্থীদের বহিষ্কার করা হয়েছে। তাঁরা সংখ্যায় কম। জনগণ উন্নয়নের স্বার্থে সব ইউনিয়নে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার নৌকাকেই বিজয়ী করবে।