কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় বর্তমান ও সাবেক এমপির বিরোধের জেরে তাদের সমর্থকরা আবারও সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিজয় দিবসে শহীদ মিনারে ফুল দেওয়াকে কেন্দ্র করে তাঁদের মধ্যে ব্যাপক ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও মারামারি হয়। এতে ইটপাটকেলের আঘাতে দুপক্ষের অন্তত অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়েছে। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে গুরুতরভাবে আহত হয়েছে তিনজন। পরে বেলা ১২টার দিকে পাকুন্দিয়া-মির্জাপুর সড়কে একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানায়, কিশোরগঞ্জ-২ আসনের (পাকুন্দিয়া-কটিয়াদী) এমপি নূর মোহাম্মদের সঙ্গে গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় থেকে সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট সোহরাব উদ্দিনের স্থানীয় রাজনীতি ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধ রয়েছে। সম্প্রতি সোহরাব উদ্দিনকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি করা হয়। এ ঘটনায় দুপক্ষের বিরোধ আরও তীব্র হয়। এসব নিয়ে তাদের আগে বেশ কয়েকবার মারামারিও হয়েছে। এমপি পক্ষের লোকজন তাকে এলাকায় সাংগঠনিক কাজকর্মে নিয়মিত বাধা দিচ্ছিল। এই পরিস্থিতিতে তিনি (সোহরাব উদ্দিন) স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বিজয় দিবসে রীতিমতো প্রস্তুতি গ্রহণ করে কয়েক হাজার লোক নিয়ে সকালে উপজেলা সদরে ঢুকে পড়েন।
খবর পেয়ে এমপি নূর মোহাম্মদের সমর্থকেরাও সংঘবদ্ধ হয়ে তাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। এ অবস্থায় পুরো উপজেলা সদরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। শুরু হয়ে যায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ। দুপক্ষের হাতে ছিল দেশীয় ধারালো অস্ত্রশস্ত্র। এই গোলযোগের মধ্যেই সোহরাব উদ্দিন উপজেলা পরিষদের ভেতরে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে এলাকা ত্যাগ করেন।
এমপি নূর মোহাম্মদের সমর্থকদের অভিযোগ, হেলমেট পরা বাইরের সশস্ত্র লোকজন নিয়ে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে পাকুন্দিয়া ঢোকেন সোহরাব উদ্দিন। তাদের অনেকের শরীরে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেটও ছিল। এ সময় তাদের হামলায় তিনজন গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন।
তারা দাবি করেন, বল্লমের আঘাতে কুশাকান্দা গ্রামের মিন্টু, ধারালো অস্ত্রের আঘাতে পাকুন্দিয়া সদরের মুক্তিযোদ্ধা মকসুদ আলী ও নূরুল ইসলাম গুরুতরভাবে আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে প্রথমজনকে চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
তবে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, দু-পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হলেও সেখানে বড় ধরণের সংঘর্ষ হয়নি। এ কারণে পুলিশকেও তেমন একটা অ্যাকশনে যেতে হয়নি। এলাকায় বর্তমানে উত্তেজনা থানায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে, মারামারি পর এ দিকে ১২টার দিকে পাকুন্দিয়া-মির্জাপুর সড়কে একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের লোকজন ঘটনা স্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে এর আগেই বাসটি পুড়ে যায়। তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি।
এ বিষয়ে সাবেক এমপি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সোহরাব উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘বিজয় দিবসে শহীদদের শ্রদ্ধা জানানো সবারই অধিকার রয়েছে। আমি আমার লোকজন নিয়ে সেখানে ফুল দিতে গেলে এমপি নূর মোহম্মদের সমর্থকেরা আমাকে বাধা দেয় ও প্রতিরোধ তৈরি করার চেষ্টা করে। এ সময় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও মারামারি ঘটনা ঘটে। পরে এসব উপেক্ষা করে যথারীতি ফুল দিয়ে বাড়ি ফিরে যাই। মারামারি, উত্তেজনা ও ত্রাস সৃষ্টির দায় আমার না, এমপি ও তার সমর্থকদের।’
এমপি নূর মোহাম্মদের সমর্থকদের পক্ষ থেকে জেলা শ্রমিক লীগের উপদেষ্টা আতাউল্লাহ সিদ্দিক মাসুদ জানান, সাবেক এমপি সোহরাব ও তার লোকজন বন্দুক-পিস্তলসহ হেলমেট ও বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরে রীতিমতো সন্ত্রাসী স্টাইলে পাকুন্দিয়া যান। এ সময় তাদের হামলায় বেশ কয়েকজন আহত হয়। তখন আমাদের সঙ্গে তাদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল বিনিময় ও সংঘর্ষ হয়। এ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পুরো দায় সোহরাব উদ্দিনের।
পাকুন্দিয়া থানার ওসি মো. সারোয়ার জাহান জানান, ফুল দেওয়াকে কেন্দ্র করে বর্তমান ও সাবেক এমপির সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে ৯ জন আহত হয়। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। পরে একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। পুলিশ ২ রাউন্ড টিয়ার গ্যাসের শেল ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।