ময়মনসিংহের ত্রিশালে অবস্থিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পেলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর।
আজ বুধবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সরকারি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা প্রজ্ঞাপনের তথ্যসূত্রে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. হুমায়ুন কবীর।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, গত ১৩ নভেম্বর শেষ হয়েছিল জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. এ এইচ এম মোস্তাফিজুর রহমানের মেয়াদকাল। এর একমাস পর রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে (১৫ ডিসেম্বর) বুধবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সরকারি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার উপসচিব মো. মাহমুদুল আলম স্বাক্ষরিত জারিকৃত প্রজ্ঞাপনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর দে’কে কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে চার বছরের জন্য উপাচার্যের দায়িত্ব প্রদান করা হয়।
ড. সৌমিত্র শেখর নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হিসেবে নিয়োগের আদেশে পর্যন্ত তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। এর আগে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘নজরুল গবেষণা কেন্দ্র’ এর প্রাক্তন পরিচালক ও ‘নজরুল- অধ্যাপক’ (২০১৪-‘১৭)। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির কার্যকরী পর্ষদে একাধিকবার (২০১৬, ২০১৮, ২০১৯) নির্বাচিত সদস্য এবং টিএসসি এর উপদেষ্টা।
বাংলা বিভাগে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর উভয় পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণি প্রাপ্ত। ড. সৌমিত্র শেখর সরকারি বৃত্তিপ্রাপ্ত গবেষক হিসেবে মাত্র ঊনত্রিশ বছর বয়সে পিএইচ. ডি. ডিগ্রি অর্জন করেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অধ্যাপক ড. ক্ষেত্র গুপ্তের তত্ত্বাবধানে। তিনি বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৯৬ সালে যোগ দেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে। পরের বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের স্থায়ী পদে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। ছাত্রজীবন থেকেই সাহিত্য শিল্পানুরাগী; লেখালেখির শুরু করেন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে নাটকের প্রতি অনুরাগী হন। সেই সূত্রেই কয়েকটি নাটকে অভিনয় করেন এবং দু-তিনটি নাটকও লেখেন। শেষ অবধি অধ্যাপনাতেই আত্মনিয়োগ এবং সাহিত্য সমালোচনা সাহিত্যে মনোযোগী হন। আনন্দবশত টেলিভিশনেও কাজ করেন। সাহিত্য আলোচনায় তিনি প্রয়োগ করেন একান্ত নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি।
ব্যক্তির মন- জোগান লেখায় বিশ্বাস নেই তাঁর। ঢাকা ও কলকাতা থেকে প্রকাশিত তাঁর রচিত গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থাবলিঃ ‘গদ্যশিল্পী মীর মশাররফ’ (১৯৯৫; ২০০১; ২০১৫); নজরুল কবিতার পাঠভেদ ও অন্যান্য প্রসঙ্গ’ (২০০১); ‘বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা’ (২০০৪); ‘সিভিল সোসাইটি ও অন্যান্য প্রবন্ধ’ (২০০৪); ‘ব্যাকরণ সন্ধান’ (২০০৬); ‘কথাশিল্প অন্বেষণ’ (২০০৬); ‘সত্যেন সেনের উপন্যাসে জীবন ও শিল্পের মিথস্ক্রিয়া’ (২০০৭); ‘ষাটের কবিতাঃ ভালোবাসার শরবিদ্ধ কবিক‚ল’ (২০১০); ‘ভাষার প্রাণ ভাষার বিতর্ক’ (২০১১); ‘সরকারি কর্মকমিশন ও শিক্ষাভাবনা’ (২০১২); ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ঃ চেতনার বাতিঘর’ (২০১৩); ‘নজরুলঃ আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি এবং শিল্পের বোধ’ (২০১৩); ‘মোসলেম ভারত বিষয় বিশ্লেষণ’ (২০১৪; ২০১৯); ‘শিক্ষার ধারা পরীক্ষার কারা’ (২০১৭)।
বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত রণেশ দাশগুপ্তের রচনাবলি; অন্যান্য প্রকাশনার নির্বাচিত ‘মোসলেম ভারত’, ‘সুধীন্দ্রনাথঃ শতবর্ষে আলোছায়া’, বিভূতিভূষণঃ কথা ও সাহিত্য’, ‘লোক উৎসব নবান্ন’, ‘হাসান হাফিজুর রহমানঃ ভবিষ্যতের সাঁকো’সহ তাঁর বেশ কিছু সম্পাদিত গ্রন্থও আছে। ড. শেখর বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশ ভাষা-সাহিত্যের জীবন সদস্য। গবেষণার জন্য তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনস এওয়ার্ড, (২০০১), ময়েনউদ্দীন ফাউন্ডেশন পদক (২০০৮) ও নজরুল পদক (২০১৪) লাভ করেন।
নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে তার যোগদানের সংবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তা,কর্মচারীসহ ত্রিশালের বিভিন্ন স্তরের মানুষের ফেসবুকে অভিনন্দন বার্তায় সরব।