ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইনে স্পষ্ট বলা আছে, ‘আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, ইটভাটা যে জেলায় অবস্থিত সেই জেলার জেলা প্রশাসকের নিকট হইতে লাইসেন্স গ্রহণ ব্যতিরেকে, কোনো ব্যক্তি ইটভাটা স্থাপন ও ইট প্রস্তুত করিতে পারিবে না।’ তবে এ আইনের তোয়াক্কা না করেই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া বছরের পর বছর গৌরীপুরে চলছে অবৈধ ইটভাটা। মালিকেরা প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার মুনাফা করলেও সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব। আসন্ন মৌসুমেও এসব ভাটায় ইট পোড়ানোর জোরালো প্রস্তুতি চলছে।
অভিযোগ রয়েছে, প্রতি বছর ১-২টি অভিযানে নামমাত্র জরিমানা আদায় করলেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয় না প্রশাসন। সংশ্লিষ্ট ওপর মহলকে ম্যানেজ করেই চলে এসব ইটভাটা। মালিকদের ক্ষমতার দাপটের কাছে কখনো কখনো প্রশাসনও অসহায় হয়ে যায় বলেও জানা গেছে। অপরিকল্পিতভাবে যত্রতত্র গড়ে ওঠা এসব ভাটার কারণে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য। ফসলের ক্ষয়ক্ষতিসহ জনস্বাস্থ্যের জন্য চরম হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে অবৈধ এসব ইটভাটা।
সরেজমিনে দেখা যায়, বোকাইনগর ইউনিয়নের দাড়িয়াপুর গ্রামে পাশাপাশি তিনটি ইটভাটা। শাপলা ব্রিকস, তানিয়া ও টিএমএ। ফসলি জমিতে স্থাপিত এসব ভাটায় পুরোদমে ইট তৈরির জোর প্রস্তুতি চলছে। এ ছাড়া রামগোপালপুর গ্রামে সাফায়ত ব্রিকস, এফ এম ব্রিকস ও এসএমএ ইটভাটা ঘুরে দেখা যায়, শ্রমিকেরা দিনরাত কাজ করছেন ফিল্ড তৈরির জন্য। এর মধ্যে শাপলা ব্রিকসকে চলতি মাসের শুরুতে গৌরীপুরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোসা. নিকহাত আরা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। তিনি জানান, শাপলা ব্রিকসের কোনো কাগজপত্র নেই। তাদের বিরুদ্ধে নিম্নমানের ইট তৈরি, আকারে ছোট ও কাঠ পোড়ানোসহ নানা অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে শাপলা ব্রিকসের স্বত্বাধিকারী মো. স্বপন মিয়া জানান, ২০১৭ সালে তিনি ইটভাটাটি স্থাপন করেন। ছাড়পত্রের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রথমে তিনি বলেন, ‘আছে।’ পরে পরিবেশ অধিদপ্তরের তালিকায় নাম না থাকার কথা জানালে তিনি স্বীকার করেন, ছাড়পত্র পাননি। ফসলি জমিতে ভাটা স্থাপনের কারণ জানতে চাইলেও তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
এভাবে যত্রতত্র ইটভাটা স্থাপনের বিষয়ে গৌরীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. রবিউল ইসলাম বলেন, ইটভাটায় সৃষ্ট কালো ধোয়া সরাসরি মানুষের ফুসফুস আক্রান্ত করে। এতে অ্যাজমা, শ্বাসকষ্ট, অ্যালার্জিসহ নানা রোগ দেখা দিতে পারে।
গৌরীপুর ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি মো. মোসলেম উদ্দিন বলেন, ‘উপজেলায় ১৩টি ইটভাটা রয়েছে। এর মাঝে কিছু ভাটা পরিবেশ অনুমোদন পেয়েছে। অন্যরা চেষ্টা করেছেন।’
ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের লাইসেন্স ও বাণিজ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ছাড়পত্র পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ইটভাটার লাইসেন্স ও অনুমোদন দেওয়া হয়। দীর্ঘদিন যাবৎ গৌরীপুরে ইটভাটাগুলো অনুমোদন ছাড়াই কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
ময়মনসিংহ পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক লোভানা জামিল বলেন, গৌরীপুরে এস এম (সিমি) ব্রিকস নামে একটি ইটভাটার পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র আছে। ছাড়পত্র ছাড়া যেসব ইটভাটা চলছে, তাঁদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।