নানার সঙ্গেই রাতে ঘুমাত নাতি মঞ্জুরুল ইসলাম বাবু। কাজ না করে বাজে বন্ধুদের সঙ্গে সারা দিন ঘোরাঘুরি করত আর দিন শেষে নানার কাছে টাকার জন্য বায়না ধরতো। প্রতিদিন নাতির বায়না পূরণ করা সম্ভব হতো না বৃদ্ধ নানার। সামান্য কাঠ ব্যবসায়ী নানা আব্দুর রশিদের সঙ্গে এ নিয়ে বিভিন্ন সময় ঝগড়া হতো নাতির। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় এ নিয়ে নানা নাতির আবারও ঝগড়া হয়। নানা আব্দুর রশিদ শাসন হিসেবে নাতিকে লাঠি দিয়ে একটি আঘাত করে। এ ক্ষোভেই ওই রাতে মঞ্জুরুল ইসলাম ঘুমের মাঝে নানা আব্দুর রশিদের মাথায় শাবল দিয়ে আঘাত করে। এতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ৭০ বছরের বৃদ্ধ আব্দুর রশিদের। পরে ঘরের মেঝেতে মাটি খুঁড়ে গর্তে চাপা দিয়ে ঘরের বাইরে তালা লাগিয়ে পালিয়ে যায় মঞ্জুরুল। থানা-পুলিশের কাছে এমনই বর্ণনা দেন গ্রেপ্তারকৃত মঞ্জুরুল ইসলাম বাবু।
নিখোঁজের চার দিন পর গত বৃহস্পতিবার রাতে মুক্তাগাছা শহরের ইশ্বরগ্রামের মাঝিপাড়া এলাকা থেকে তালাবদ্ধ ঘরের মেঝের নিচ থেকে মাটি খুঁড়ে আব্দুর রশিদের গলিত লাশ উদ্ধার করে মুক্তাগাছা থানা-পুলিশ। এ ঘটনায় ওই দিনই নাতি মঞ্জুরুল ইসলাম বাবুকে আটক করে পুলিশ। সে একই গ্রামের জিয়াউর রহমানের ছেলে। আজ শনিবার তাকে আদালতে পাঠানো হয়।
স্থানীয়রা জানান, ইশ্বরগ্রামের মাঝিপাড়া এলাকার বাসিন্দা ৭০ বছর বয়সের আব্দুর রশিদ সামান্য কাঠের ব্যবসায়ী। গত রোববার সন্ধ্যার পর থেকে তিনি নিখোঁজ হন। তাঁর কোনো ছেলে সন্তান না থাকায়, মেয়েরাই তাকে দেখাশোনা করতেন। তার বড় মেয়ে হেনা আক্তার বসবাস করেন বাবার সঙ্গেই। হেনা আক্তার একটি ক্লিনিকে চাকরি করেন। ঘটনার দিন কাজ থেকে ফিরে আব্দুর রশিদকে বাড়িতে পাননি হেনা আক্তার। এরপর থেকে তিনি তার বাবা আব্দুর রশিদকে বিভিন্ন এলাকায় খোঁজেন। বৃদ্ধের সঙ্গে বিভিন্ন সময় রাতে ঘুমাতেন আব্দুর রশিদের দ্বিতীয় মেয়ে বিনা আক্তারের ছেলে মঞ্জুরুল ইসলাম বাবু (১৯)। ঘটনার দিন থেকে সেও নিখোঁজ হন।
গত বৃহস্পতিবার রাতে বৃদ্ধের তালাবদ্ধ শোয়ার ঘর থেকে দুর্গন্ধ পেয়ে বড় মেয়ে হেনা আক্তার তার অন্য বোনদের খবর দেন। তারা তালা ভেঙে দেখেন ঘরের ভেতরে গর্তের ওপর মাটি ভরাট করা ও সেখান থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। পাশেই পড়ে ছিল একটি কোদাল। পরে থানা-পুলিশ সেখান থেকে মাটি খুঁড়ে বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার করেন। ওই দিনই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে মঞ্জুরুল ইসলামকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।
মুক্তাগাছা থানার ওসি মাহমুদুল হাসান বলেন, সামান্য তুচ্ছ ঘটনায় শাবল দিয়ে আঘাত করে হত্যা করা হয় বৃদ্ধ আব্দুর রশিদকে। পরে ঘটনা ধামাচাপা দিতে ঘরের মেঝে গর্ত করে সেখানে মাটি চাপা দেওয়া হয়। গ্রেপ্তারকৃত বৃদ্ধের মেয়ের ঘরের নাতি মঞ্জুরুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছে। তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে।