এক মাসের ব্যবধানে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আঠারবাড়ি এলাকায় ফের ডাকাতি সংঘটিত হয়েছে। এবারও ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক এক চেয়ারম্যান ও বীর মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে এই ডাকাতি সংঘটিত হয়। এ সময় ডাকাতরা বাড়িতে প্রবেশ করে অস্ত্রের মুখে সবাইকে জিম্মি করে ভাঙচুর ছাড়াও স্বামী-স্ত্রীকে কুপিয়ে স্বর্ণালঙ্কার লুটে নিয়ে যায়। তার মধ্যে বাড়ির মালিক বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে ইচ্ছুক মো. সোহেল রহমানকে মুমূর্ষু অবস্থায় আইসিইউতে রাখা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার ভোররাত ৩টার দিকে এ ধরনের ঘটনা ঘটে উত্তর বনগাঁও গ্রামে।
জানা যায়, ওই দিন রাত ৩টার পর ১০-১৫ জনের একটি দুর্বৃত্তদল শয়নকক্ষে প্রবেশ করে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে সোহেলকে গুরুতর আহত করে। দুর্বৃত্তরা চলে যাওয়ার সময় আলমিরা ভেঙে পাঁচ ভরি সোনার গয়না, মা আমেনা বেগম ও তার দুই ভাতিজির পরনে থাকা সোনার চেইন, কানের দুল ইত্যাদি নিয়ে যায় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নান্দাইল-কেন্দুয়া সড়কের পশ্চিম পাশে আঠারবাড়ি ডিগ্রি কলেজ ও এমসি উচ্চ বিদ্যালয়। সড়কের পূর্ব দিকে পিচঢালা রাস্তা ধরে এগিয়ে গেলে উত্তর বনগাঁও গ্রাম। সেই গ্রামের আমেনা ভবনের বাসিন্দা সোহেল রহমান। তার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত মতিউর রহমান।
সোহেলের বড় ভাবি ঘটনা সম্পর্কে বলেন, গতকাল বুধবার দিবাগত রাত ৩টার পর ভবনের প্রবেশপথের ফটকের তালা ভেঙে ১০-১৫ জনের একটি দুর্বৃত্তদল ঘরে প্রবেশ করে। তারা সোজা সোহেলের কক্ষে চলে যায়। দুর্বৃত্তরা মনে হয় সোহেলের কক্ষটি আগে থেকেই চিনত। সেই কক্ষে গিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে সোহেলকে কোপাতে শুরু করে। চিৎকার-চেঁচামেচিতে বাড়ির বাসিন্দাদের ঘুম ভেঙে গেলে হামলাকারীরা প্রত্যেকের কক্ষের দরজার সামনে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে দাঁড়ায়। অন্যদিকে সোহেল হামলাকারীকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে কক্ষের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করে দেন। পরে হামলাকারীরা বড় ভাই জুয়েলকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সোহেলকে দরজা খুলতে বাধ্য করে। পরে সোহেলকে দ্বিতীয় দফায় কুপিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় মেঝেতে ফেলে রাখে। এ সময় স্বামীকে বাঁচাতে গিয়ে আহত হন সোহেলের স্ত্রী মাহমুদা রহমান মনি (৩৮)।
জুয়েলের পরিবারের অন্য সদস্যরা অভিযোগ করে বলেন, সোহেল আসন্ন ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। বাসিন্দাদের অভিযোগ, ঘটনাটি ডাকাতি নয়। সোহেলকে হত্যার উদ্দেশ্যে এ হামলা চালানো হয়েছে।
গ্রামের লোকজন জানান, সোহেল রহমান আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। বাড়িতে হামলার ঘটনাটি টাকা-পয়সা লুটে নেওয়ার জন্য ডাকাতি বলে মনে হচ্ছে না। টাকা লুটে নেওয়ার ইচ্ছা থাকলে হামলাকারীরা কাউকে জিম্মি করে বা অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে নিতে পারতেন। কিন্তু হামলাকারীরা সোহেল রহমানকে যেভাবে কুপিয়ে আহত করেছে তাতে মনে হচ্ছে, সোহেলকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার পূর্বপরিকল্পনা নিয়ে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, এর আগেও গত ৩০ আগস্ট গভীর রাতে একই কায়দায় পাশেই আঠারবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের প্রয়াত চেয়ারম্যান মো. আলমগীরের বাসায়ও ডাকাতি সংঘটিত হয়। সেখানেও প্রয়াত চেয়ারম্যানের স্ত্রী-সন্তানদের জিম্মি করে স্বর্ণালঙ্কার ও টাকা-পয়সা লুটে নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুদল কাদের মিয়া বলেন, এ বিষয়ে তদন্ত চলছে।