মুজিব জন্মশতবর্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার “বীর নিবাস” পাচ্ছেন নেত্রকোণার বারহাট্টা উপজেলার ১২ বীর মুক্তিযোদ্ধা। অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাগণের জন্য আবাসন নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যেই বীর নিবাসসমূহ নির্মাণ কাজের প্রক্রিয়া শুরু করেছে প্রশাসন।
জানা যায়, মুজিব বর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে সারাদেশের বাছাইকৃত ৩০ হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধা বা তাদের উত্তরাধিকারীগণের বসবাসের জন্য পাকা বাড়ি নির্মাণ করে দেবে সরকার। একই আদলে নির্মাণ করা এইসব বাড়ির নাম হবে “বীর নিবাস”।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও বীর নিবাস প্রকল্প বাস্তায়ন কমিটির সভাপতি এস. এম. মাজহারুল ইসলাম বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিব জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে গৃহহীনদের বিনামূল্যে জমিসহ ঘর দেওয়ার পর বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য একতলা দালানবাড়ি নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে। অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা বা তাদের উত্তরাধিকারী স্ত্রী-সন্তানদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার এই প্রকল্প হাতে নিয়েছে। বারহাট্টায় বীর নিবাস নির্মাণের জন্য সরেজমিনে পরিদর্শন ও যাচাই কাজ সম্পন্ন শেষে ১৬ বীর মুক্তিযোদ্ধার নামের তালিকা প্রেরণ করা হয়। তম্মদ্ধে প্রথম পর্যায়ে ১২টি বীর নিবাসের বরাদ্দ পাওয়া গেছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও বীর নিবাস প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য-সচিব মো. লতিফুর রহমান বলেন, প্রতিটি বাড়ির জায়গা ধরা হয়েছে ১ হাজার ৭৬৩ বর্গফুট। এই জায়গার উপর ৭০৪ বর্গফুটের পাকা ভবন নির্মাণ করা হবে। দুটি শয়ন কক্ষ, দুটি শৌচাগার, বৈঠকঘর, খাবার ঘর ও রান্নাঘর থাকবে। এ ছাড়া থাকবে একটি সাব-মার্জিবুল পাম্প। প্রতিটি বীর নিবাসের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩ লক্ষ ৪৩ হাজার ৬১৮ টাকা। ঠিকাদারের মাধ্যমে কাজের বাস্তবায়ন হবে।
এ দিকে, “বীর নিবাস” নামের ব্যাপারে ক্ষোব্দ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বেশ ক’জন বীর মুক্তিযোদ্ধা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, যারা জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন, তারা সকলেই “বীর”। কিন্তু যারা “বীর নিবাসে” বসবাস করবেন, এক সময় সমাজে শুধু তারাই “বীর” বলে পরিচিতি পাবেন। বারহাট্টায় বর্তমানে ১২টি পরিবার “বীর নিবাস” পাচ্ছেন। ভবিষ্যতে হয়তো আরো কিছু পরিবার পাবেন। “বীর নিবাস” হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উপহার। এই উপহার পাচ্ছেন গুটিকতক পরিবার। অধিকাংশ বীর মুক্তিযোদ্ধা বা তাদের স্ত্রী-সন্তানাদির ভাগ্যে এই উপহার জুটবে না। তারা নিজেদের তৈরি সাধারণ গৃহে বসবাস করবেন। বিষয়টি তাদের সন্তান-সন্ততিদের ভাবিয়ে তুলেছে। বারহাট্টায় তিন শতাধীক মুক্তিযোদ্ধা পরিবার রয়েছেন।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ মোহাম্মদ আব্দুল কাদের বলেন, অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধা, বীরাঙ্গনা, শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা, প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধাগণের বিধবা স্ত্রী ও সন্তানদের জন্য “বীর নিবাস” নির্মাণ করা হচ্ছে। কিন্তু বীর মুক্তিযোদ্ধা নামের আগে “অসচ্ছল” শব্দের ব্যবহার সঠিক হয় নাই। সকল বীর মুক্তিযোদ্ধা বা তাদের উত্তরাধিকারীগণ প্রতিমাসে বিশ হাজার টাকা করে সম্মানীভাতা পাচ্ছেন। এই টাকায় তারা স্বাভাবিক ভাবেই চলতে পারছেন। বীর মুক্তিযোদ্ধগণের সন্তান-সন্ততিরা নিজেদের অসহায় বা অসচ্ছল ভাবতে চায় না। তারা অসচ্ছল শব্দটাকে সম্মানের জন্য হানিকর মনে করে।