1. najmush71@gmail.com : admin : Najmush Shakeer
  2. munir2002lubnan@gmail.com : Munirul Huq Khan : Munirul Huq Khan
রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫, ১২:৩৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ

বাকৃবিতে রাজনৈতিক সভা নিয়ে নতুন বিতর্ক

রিপোর্টার
  • আপডেট : সোমবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২১
ছবি : সাদিক খান

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) অনুষ্ঠিত একটি রাজনৈতিক আলোচনা সভা ঘিরে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এতে করে দু পক্ষের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি, পক্ষ-বিপক্ষের সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনায়, শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা এটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে বিভিন্ন মাধ্যমে তৈরি করেছেন নতুন বিতর্ক। যা ভালোভাবে দেখছেন না বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনায় ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। তারা মনে করছেন রাজনৈতিক অনুষ্ঠান ঘিরে বিভেদ-বিভাজন শিক্ষা-গবেষণাকেই ব্যাহত করবে। এতে করে বড় রকমের ক্ষতির মুখে পড়তে পারে সম্প্রতি টাইম হায়ার এডুকেশনে বিশ্ব র‌্যাংকিং এ স্থান পাওয়া দেশের অন্যতম এ বিশ্ববিদ্যালয়টি।

জানা যায়, বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরামের একাংশের আয়োজনে ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশে কৃষি শিক্ষার অগ্রযাত্রা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভার আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসান। এ ছাড়া ময়মনসিংহের বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃর্বৃন্দ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু শিক্ষক সংগঠনের ব্যানারে অনুষ্ঠিত ওই অনুষ্ঠানে শিক্ষকদের অংশগ্রহণ ছিল না বলেই চলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাড়ে ৫ শতাধিক শিক্ষকের মধ্যে মাত্র ৪০-৪৫ জন শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু এদিকে বন্ধ ক্যাম্পাসে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে সারাদেশ থেকে ৫০-৬০ হাজারের অধিক মানুষের সমাগম ঘটে।

আয়োজকরা অনুষ্ঠান শুরুর আগে স্বাস্থ্যবিধি মানার কথা বললেও অনুষ্ঠান ঘিরে কোন ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মানেননি বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। কেবলমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলানায়তনে অনুষ্ঠানের আয়োজন করার কথা থাকলেও বাহিরে মিলানায়তনের বাইরেও ছামিয়ানা টাঙানো হয়। লোকজনের সমাগমের কথা চিন্তা করে ১০-১২টি মাইক টাঙিয়ে বক্তব্য শোনার ব্যবস্থা করেন তারা। তবে এ আয়োজনের বিস্তৃতি জানতেন না বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মহির উদ্দীন। তিনি বলেন, বাইরে থেকে এত মানুষ আসবে এটা তাকে কেউ জানায়নি।

তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে এত বড় একটি অনুষ্ঠান হয়ে গেল কিন্তু শান্তি শৃঙ্খলার কোন কমিটিতে আমাকে রাখা হয়নি। আয়োজকরা করোনা মহামারীর মধ্যে এত বিপুল সংখ্যক মানুষ নিয়ে অনুষ্ঠান করবে এটা গ্রহণযোগ্য নয়। অনুষ্ঠান ঘিরে মিলানায়তনে হট্টোগোল, হাতাহাতি, ক্যাম্পাসে স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘনসহ অপ্রীতিকর যেগুলো ঘটনা ঘটেছে তার পুরো দায়ভার আয়োজকদের।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক জানান, এরকম অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে তা আগে থেকেই আঁচ করতেছিলাম। কারণ, অনুষ্ঠানের আগে থেকে টাঙানো ময়মনসিংহসহ , বাহিরের নেতাকর্মীদের হাজার খানেক ব্যানার পোস্টার সেটিরই ইঙ্গিত দিচ্ছিল। আমি এটা ধরে নিয়েই অনুষ্ঠানের আগের দিন প্রয়োজনীয় নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে ক্যাম্পাসের আবাসিক এলাকায় ছিলাম। কিন্তু শান্তিতে সেখানেও থাকতে পারিনি। মটরসাইকেলের শোডাউন, মিছিলের শোডাউন, মাইকের শব্দ আতঙ্ক তৈরি করেছিল পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ে। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের অনুষ্ঠান শোভা পায় না। ভবিষ্যতে আর কেউ যদি এ ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন না করতে পারে সেজন্য সর্তক থাকার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অনুরোধ করছি।

আতিকুর রহমান নামের এক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেসবুক গ্রুপে লেখেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের চলিতেছে সার্কাস! যেখানে কভিডের ভয়ে প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয় খুলতেই ভয় পাচ্ছে সেখানে বহিরাগতদের এভাবে শোডাউন, মিছিল মাইকিং কতটুকু শোভা পায়? এইযে তথাকথিত শিক্ষক গ্রুপ বিশ্ববিদ্যালয়কে তাদের বাপ দাদার সম্পত্তি মনে করে যা ইচ্ছা তাই করছে, এদের বিরুদ্ধে বলার কি কেউ নাই? বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন এত রাজনীতি? শিক্ষকতা একটা মহান পেশা! সেখানে ছাত্র পড়ানো আর গবেষণা বাদ দিয়ে এভাবে রাজনীতি করতে আপনাদের লজ্জা হয় নাহ?

গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরামের আরেক অংশের সভাপতি অধ্যাপক ড. আবু সালেহ মাহফুজুল বারী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকের সংগঠন থেকে বেরিয়ে যাওয়া কিছু বামপন্থি শিক্ষক, খুব বেশি হলে এদের সংখ্যা মাত্র ৩০-৩৫ জন, যারা অনুষ্ঠানটি আয়োজন করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে এর আগে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আলোচনা সভায় এত কম শিক্ষক অংশ নিয়েছে কিনা তা আমার জানা নেই। বন্ধ ক্যাম্পাসে এ ধরনের অনুষ্ঠান মানায় না। করোনা মহামারীর এই পরিস্থিতিতে এ ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন সত্যিই দৃষ্টিকটু।

বাকৃবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. সুবাস চন্দ্র দাস বলেন, ময়মনসিংহের অন্যত্র থেকে ট্রাকে করে বিশ্ববিদ্যালয়ে মানুষ আসবে এটা কখনই কাম্য ছিল না। তাছাড়া এ ধরনের প্রোগ্রামে ক্যাম্পাসের ভেতরে ১০-১২টি মাইক ব্যবহার করা বিশ্ববিদ্যালয়ে শোভা পায় না। যে মেজাজে অনুষ্ঠানটি হলো, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ মেজাজের কোনো অনুষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কিংবা শিক্ষার্থীর পক্ষে মেনে নেয়া সম্ভব না।

এদিকে এ অনুষ্ঠান ঘিরে বাকৃবি অ্যালামনায় অ্যাসোসিয়েশনের নাম বিকৃত করে সর্বস্তরের কৃষিবিদদের সভায় অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার অনুরোধ জানানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। অনুষ্ঠানের আগেই একটি লিখিত বিবৃতিতে বাকৃবি অ্যালামনায় অ্যাসোসিয়েশেনের নির্বাহী সভাপতি কৃষিবিদ মো. হামিদুর রহমান ও নির্বাহী সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ বদিউজ্জামান বাদশা স্বাক্ষরিত একটি লিখিত বিবৃতিতে বলেন, অ্যালামনায় এসোসিয়েশন এ ধরনের কোন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার আহবান জানান নি। সর্বস্তরের কৃষিবিদদের মধ্যে বিভাজন ও বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারী স্বার্থান্বেষী মহলের উদ্দেশ্য প্রণোদিত ষড়যন্ত্রে সবাইকে সতর্ক থাকার আহবান জানান তারা।

অভিযোগের পরিপ্রেক্ষেতে জানতে চাইলে অনুষ্ঠানের আয়োজক গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরামের একাংশের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. আলমগীর হোসেন বলেন, অনেক শিক্ষক স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা চিন্তা করে হয়তো অনুষ্ঠানে অংশ নেননি। আমরা আমাদের সাধ্যমত সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তায় যেন কোনো ব্যাঘাত না ঘটে।

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২৩ আঙ্গর টিভি