প্রায় এক হাজার কোটি টাকায় রেলওয়ের জন্য ৩০টি নতুন ইঞ্জিন (লোকোমোটিভ) কেনা হয়েছে। কিন্তু দেশের পুরোনো লাইনে এসব ইঞ্জিন ব্যবহার করা যাচ্ছে না। কারণ ২০০ হর্স পাওয়ারের বেশি শক্তির ইঞ্জিনগুলো অনেক বড় হওয়ায় এর ওজনও বেশি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রেলের প্রকৌশল ও যান্ত্রিক বিভাগের দুই কর্মকর্তা জানান, ঢাকা-জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ-জামালপুর ও ঢাকা-আখাউড়া-সিলেট রুটসহ সংস্কার না হওয়া প্রায় এক হাজার কিলোমিটার রেললাইনে নতুন ইঞ্জিনগুলো চালানো সম্ভব নয়। কারণ এসব রুটের এক্সেল লোড (ভারবহন ক্ষমতা) ১০-১১। কিন্তু নতুন ইঞ্জিনগুলোর ভারবহন ক্ষমতা ১৫। এসব ইঞ্জিন শুধু ঢাকা-চট্টগ্রাম ও উত্তরবঙ্গ রুটে চালানো সম্ভব। এসব রুটে এই ইঞ্জিনের ভারবহন ক্ষমতা আছে।
দক্ষিণ কোরিয়ান প্রতিষ্ঠান হুন্দাই রোটেম-এর কাছ থেকে প্রায় ৭০০ কোটি টাকায় কেনায় ২০টি মিটারগেজ লোকোমোটিভের মধ্যে ১০টি গত জুনে দেশে এসে পৌঁছে। ট্রায়াল রান শেষে জুলাইয়ে রেল বহরে যুক্ত হয়েছে এগুলো। করোনার কারণে জাহাজ না পাওয়ায় বাকি ১০ লোকোমোটিভ আনা যাচ্ছে না বলে জানান প্রকল্প পরিচালক হাসান মনসুর।
এর আগে ২০১৮ সালে একই প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ৩০০ কোটি টাকায় ১০টি লোকোমোটিভ কেনা হয়। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে এসব লোকোমোটিভ দেশে এসে পৌঁছায়। তবে কেনায় দুর্নীতি ও বিভিন্ন সমস্যার কারণে গত এক বছরও রেলবহরে যুক্ত হয়নি এসব ইঞ্জিন।
রেলওয়ের প্রকৌশল দফতর জানায়, দেশে প্রায় ৩ হাজার ১৮ কিলোমিটার রেললাইন আছে। পূর্বাঞ্চলে ১৩৩৩ এবং পশ্চিমাঞ্চলে ১৬৮৪ কিলোমিটার। এর মধ্যে দুই অঞ্চল মিলে এক হাজার কিলোমিটার রেললাইন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। কিছু কিছু রেললাইন আছে ৩০ বছরও সংস্কার হয়নি। বিশেষ করে ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-আখাউড়া-সিলেট রুট অনেক পুরোনো। এসব লাইন সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত রেল বহরে যুক্ত হতে যাওয়া ৩০ ইঞ্জিন চালানো যাবে না।
চলতি বছরের জুনে দেশে আসা ১০টি মিটারগেজ ইঞ্জিন তাই সংস্কার হওয়া ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে চলাচল করছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ হাসান মনসুর। তিনি জানান, ওজন বেশি হওয়ার কারণে পুরোনো লাইনে চালানো যাবে না। শুধু যেসব লাইন নতুন করে সংস্কার হয়েছে, সেসব লাইনে চালানো সম্ভব।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ৩০টি ইঞ্জিন রেলবহরে যুক্ত হওয়ার আগে পুরোনো সব রেললাইন সংস্কার ও ভারবাহন ক্ষমতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে আখাউড়া-সিলেট রুটটি ডুয়েলগেজে রূপান্তর করতে ২০১৯ সালে প্রকল্প হাতে নেওয়া হলেও এখনো প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ দিতে পারেনি রেলওয়ে।
রেলওয়ের প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা এস এম সল্লিমুল্লাহ বাহার বলেন, আখাউড়া-সিলেট রুটের এখনো প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ হয়নি। নিয়োগ হলে কাজের মেয়াদের বিষয়ে জানা যাবে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্রনাথ মজুমদার কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।