‘মুখ দেইখ্যা হেইল্যা (মেম্বার) শাহিদারী (বণ্টন) করছুইন। আমরার ভাইগ্যে স্লিপ নাই তো টিহা (টিকা) নাই। এইডা কিরহম কথা অইলো। সরহার তো কইছে কেন্দ্রে গেলেই টিহা নেওন যাইবো। অহন আবার স্লিপ লাগে কেরে!’
গতকাল ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মগটুলা ইউনিয়ন পরিষদ কেন্দ্রে টিকা না পেয়ে এভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন মো. মোবারক (৬০)।
গণটিকা কার্যক্রমে সারা দেশের মতো ভিড় ছিল ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার প্রতিটি কেন্দ্রেই। গতকাল সকালে মগটুলা ও মাইজবাগ ইউনিয়নের দুটি টিকাকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, যারা ইউপি সদস্যদের স্লিপ সংগ্রহ করতে পেরেছেন, শুধু তাঁরাই করোনার টিকা নিতে পেরেছেন।
মগটুলা ইউনিয়ন পরিষদ কেন্দ্রে এক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, ‘স্থানীয় ইউপি সদস্য সেলিম নিজের বাড়িতে বসে নিজের পছন্দের লোকজনকে ডেকে নিয়ে স্লিপ ধরিয়ে দিচ্ছেন।’
পরে ওই ইউপি সদস্যের বাড়িতে গিয়ে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। ইউপি সদস্য বলেন, ‘আমাকে দেড় শ স্লিপ দেওয়া হয়েছিল। এক ঘণ্টার মধ্যেই শেষ। এখন অনেকেই এসে ফেরত যাচ্ছে। এতে আমার কী করার আছে?’
সকালে মগটুলা ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে গিয়ে দেখা যায়, টিকা নিতে আসা ব্যক্তিদের জন্য বিশ্রামের ব্যবস্থা রাখা হয়নি। সেখানে কর্মরত সহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার (স্যাকমো) মো. মজনু মিয়া বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বসার ব্যবস্থা করা না হলে আমাদের তো কিছু করার নেই।’
এই কেন্দের সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক (এএইচআই) নারায়ণ চন্দ পাল জানান, তিনি টিকা গ্রহণকারীদের নিবন্ধনের কাজ করছেন। নিবন্ধনের কাজটি একটি ছাপানো ফরমে লিখে করা হচ্ছে। পরে টিকাগ্রহণকারীকে সিনোফার্মের টিকা গ্রহণের রঙিন একটি কার্ড দেওয়া হচ্ছে। তবে সেখানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পক্ষে একজন তদারকি কর্মকর্তা থাকলেও স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা নেই। এ অবস্থায় টিকা দেওয়ার কাজে নিয়োজিত নুরুল হক হলুদ নামে একজন পুরুষদের বুথে নিজের পছন্দের এক নারীকে ডেকে এনে টিকা দিচ্ছেন। এ দৃশ্য দেখে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়ানো লোকজন হৈ-হুল্লোড় শুরু করে দেয়। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
মাইজবাগ ইউনিয়ন টিকাদান কেন্দ্র খোলা হয়েছে পাশের স্থানীয় মল্লিকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, কেন্দ্রের ভেতরে এক ব্যক্তিকে ঘিরে রেখেছেন কয়েকজন নারী-পুরুষ। জানতে চাইলে ওই ব্যক্তি নিজেকে মাইজবাগ ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য হিসেবে পরিচয় দেন। এ সময় পকেট থেকে একেকটি স্লিপ বের করে একেকজনকে দিচ্ছেন। এর মধ্যে কাউকে কাউকে আবার বলা হচ্ছে যে ‘স্লিপ আর নেই।’
ওই কেন্দ্রে টিকা দেওয়ার তদারকি করছেন ইউপি চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার পারভেজ নিজেই। টিকাগ্রহীতাদের অনেকের মুখে মাস্ক ছিল না। অন্যদিকে স্যানিটাইজার ব্যবহার না করেই স্বাস্থ্য সহকারী মোছা. নিলুফারকে টিকা দিতে দেখা গেছে। টিকা দেওয়ার পর হাতে তুলার পরিবর্তে লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে কাগজ। এর ব্যাখ্যায় নিলুফার বলেন, ‘তুলার প্রয়োজন পড়লে কর্তৃপক্ষ অবশ্যই তা সরবরাহ করত।’
ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ইউএনও মো. জাকির হোসেন বলেন, প্রতিটি ইউনিয়নের জন্য ৬০০ ডোজ টিকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অবিভক্ত ওয়ার্ডগুলোর জন্য ১৫০টি করে স্লিপ দেওয়ার জন্য ইউপি সদস্যদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে স্লিপ না পেলেও টিকাকেন্দ্রে গেলেই টিকা দিতে পারবে। আমি এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’