ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুর উপজেলায় যৌতুকের জন্য স্বামীর শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রনা নিয়ে বেঁচে থাকতে পারলেন না বুশরাত জাহান (মীম) (২২)। মায়ের দুধের জন্য কাঁদছে নিহত মীমের ৬ মাসের কন্যা শিশু।
গত ২২ জুলাই শ্বশুরবাড়ীতে সকালে স্বামী ইকবাল হোসেন সবুজের লাঠির আঘাতে গুরুতর আহত হয়ে বাবার বাড়ীতে যাওয়ার পর মা সুরাইয়া আক্তার সহ পরিবারের সদস্যরা ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২৪ জুলাই রাত ১০ টায় মারা যায় সে।
নিহত বুশরাত পৌরসভার গোদারিয়া এলাকার মরহুম বাবুল ড্রাইভারের মেয়ে। এ বিষয়ে নিহতের মা সুরাইয়া আক্তার বাদী হয়ে গতকাল রবিবার রাতে ফুলপুর থানায় ইকবাল হোসেন সবুজ ও তার মা সহ ৩ জনকে আসামি, অজ্ঞাত আরো ৩ জনের নামে হত্যা মামলা দায়ের করেন। ঘটনার পর থেকে পালিয়েছে বুশরাতের স্বামীসহ পরিবারের লোকজন। ফুলপুর থানার পুলিশ আসামিদের ধরতে চেষ্টা করছেন।
গতকাল রাতে কোতোয়ালী থানার পুলিশ মীমের লাশের সুরতহাল রিপোর্ট করে ময়নাতদন্ত শেষ করার পর পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করেন। পরে রাতেই পৌরসভার গোদারিয়া এলাকায় বাবার বাড়ীতে মীমের লাশ দাফন করা হয়েছে।
নিহতের পরিবার ও স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, ৪ বছর আগে আমুয়াকান্দা এলাকার মৃত আদম আলীর ছেলে ইকবাল হোসেন সবুজের সাথে প্রেমের সম্পর্ক হয় বুশরাত জাহান মীমের। পরিবার তাদের বিয়ের ব্যবস্থা করেন। ছয় মাসের এক কন্যা সন্তান রয়েছে মীমের। প্রায় এক বছর যাবৎ যৌতুক সহ বিভিন্ন জিনিসের বায়না করে মারপিট করা হতো মীমকে।
মীমের মায়ের দাবি কয়েক দফা মেয়ের সুখের জন্য প্রায় কয়েক লক্ষ টাকার মালামাল ও নগদ অর্থ দেওয়া হয় যৌতুক লোভী পরিবারকে। এরপরও মেয়ের ওপর সবসময় শারীরিক ও মানসিকভাবে অত্যাচার আর নির্যাতন চালানো হতো। ভয় ও মানসন্মানের জন্য মেয়ে মীম তা প্রকাশ করতেন না। গত কয়েকদিন আগে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত নিয়া বাড়ীতে আসার পর গুরতর আহত অবস্থায় ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানেই মৃত্যু হয় তার।
গতকাল রাত ১১টায় ফুলপুর থানার সামনে মা সুরাইয়া বেগমের কান্না ও আহাজারিতে বাতাস ভারী হয়ে উঠে। কোন অবস্থাতেই থামানো যাচ্ছিল না তার কান্নার আওয়াজ। এ সময় তিনি বলেন, আমার এতিম মেয়ে। স্বামী মারা যাওয়ার পর ছেলে ও মেয়েকে নিয়েই বেঁচে আছি। বুকের ধন ক্যাইড়া নিলো যারা আমি শুধু আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই। আমি আর কিছুই চাই না। এ সময় সাথে থাকা মীমের ভাই মাহি ও তার ফুফু মা সুরাইয়াকে সান্তনা দিতে দেখা যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফুলপুর থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ময়না তদন্তের রিপোর্ট পেলে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে। ঘটনার সাথে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।