মো. জয়নাল ফকির (৫০)। চার মাস আগে বুকে ব্যথা নিয়ে ভর্তি হন ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগে। পাঁচ দিন চিকিৎসা শেষে সুস্থ হলে তাকে প্রয়োজনীয় ওষুধ লিখে একটি প্রেসক্রিপশন দিয়ে ছুটি দেওয়া হয়। আর চিকিৎসকের পরামর্শ ও নির্দেশক্রমে বাড়িতে এসে নিয়মিত সেই ওষুধ খেয়ে এখন তার অবস্থা বেগতিক। এর মধ্যে একজন চিকিৎসকের কাছে গেলে ধরা পড়ে এত দিন তিনি যে প্রেসক্রিপশনের ওষুধ খেয়েছেন তা তার নয়। মুক্তাগাছা উপজেলার মজিবুর রহমান নামে অপর আরেক রোগীর এই প্রেসক্রিপশন। এ অবস্থায় কাঠমিস্ত্রি জয়নার ফকির এখন গুরুতর অবস্থায় এক রকম বিনা চিকিৎসায় বাড়িতেই শয্যাশায়ী।
জানা যায়, ওই জয়নাল ফকির হচ্ছেন নান্দাইল উপজেলার বালিয়ারপাড়া গ্রামের মৃত তৈয়ব আলী ফকিরের ছেলে। কাঠমিস্ত্রির কাজ করে ভূমিহীন এই ব্যক্তি স্ত্রী ও তিন ছেলে নিয়ে কোনোমতে জীবন চালিয়ে আসছিলেন।
জয়নাল জানান, গত মার্চ মাসের শুরুতেই এলাকায় এক কৃষকের ঘর নির্মাণ করতে গেলে হঠাৎ তার বুকে ব্যথা অনুভূত হয়। এ অবস্থায় হাসপাতালে যাওয়ার পর নান্দাইল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। গত ২৫ মার্চ তিনি ওই হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন। এর মধ্যে তার অবস্থা পুরোপুরি ভালো হয়ে গেলে পাঁচ দিন পর ২৭ মার্চ তাকে ছুটি দেওয়া হয়।
তিনি আরো জানান, ছুটি শেষে বাড়িতে আসার আগে কর্তব্যরত চিকিৎসক একটি প্রেসক্রিপশন হাতে দিয়ে বলে দেন নির্দেশ মতো ওষুধগুলো খেয়ে যেতে। বাড়িতে এসে বিভিন্ন সময় প্রায় ২৫ হাজার টাকার ওষুধ কিনে খেয়ে যাচ্ছেন। তিন ছেলে বিভিন্ন মাদরাসায় আবাসিক ছাত্র হিসেবে পড়াশোনা করছে। বাড়িতে স্ত্রীই তার দেখভাল করেন। নিজের আয়-রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ধারদেনা করে ওষুধ ছাড়াও সব কিছুই দেনার ওপর চলছে। এর মধ্যে ওষুধ খেয়ে ভালোর চেয়ে দিন দিনই তার অবস্থা খারাপের দিকে যাওয়ায় গত ১৬ জুলাই তিনি ময়মনসিংহ মেডিসিনের চিকিৎসক মো. কায়সার হাসান খান ইমরানের কাছে যান। ডা. ইমরান তার প্রেসক্রিপশন দেখে জানতে চান তার নাম কী। নিজের দেওয়া নামের সঙ্গে প্রেসক্রিপশনের নামের মিল না থাকায় তখনই ভুল ধরা পড়ে। এর পর থেকেই তিনি আরো ভেঙে পড়েন।
জয়নালের স্ত্রী শেফালি বলেন, আমরা দুজনই অক্ষরজ্ঞানহীন। তাই এত দিন চিকিৎসকের বিশ্বাসের ওপর ভর করেই স্বামীকে ওষুধ খাওয়াচ্ছি। এতে স্বামীর অবস্থার অবনতি হচ্ছে। এ জন্য আমি দায়ী চিকিৎসকের বিচার চাই।
এ বিষয়ে ডা. ইমরান জানান, প্রেসক্রিপশনে অনেক সময় নামের ভুল হতে পারে মনে করে তিনি ওই রোগীর বিষয়ে বারবার জানতে চেয়েছেন। পরে দেখেন, জয়নাল যে প্রেসক্রিপশনের ওষুধ খাচ্ছেন, সেই রোগী হচ্ছেন মুক্তাগাছা উপজেলার হযরত আলীর ছেলে মজিবুর রহমান। তারপর তিনি এক ধরনের বিভ্রান্তিতে পড়েন যান। এ অবস্থায় তিনি দ্রুত কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে বলেন। পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়ার পরই বিষয়টা পরিষ্কার হবে। এ পর্যন্ত প্রেসক্রিপশনের ওষুধ না খাওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এ ঘটনার জন্য তিনি কর্তব্যরত চিকিৎসকের এক ধরনের অবহেলাকে দায়ী করেন।