এক কিশোরীর (১৪) সাথে প্রেমের সর্ম্পকের গড়ে তোলে অনার্সপড়ুয়া হাকিম। একদিন গভীর রাতে ঘরে প্রবেশ করে প্রেমিক। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে কিশোরীকে বেশ কয়েকবার ধর্ষণ করে সে। কিন্তু প্রেমিকের আচরণ ভালো লাগেনি কিশোরীর। একপর্যায়ে ধর্ষক পালিয়ে যেতে চাইলে তাকে ঝাপটে ধরে চিৎকার দেয় মেয়েটি। তার চিৎকারে পরিবারের সদস্যরা এসে ছেলেটিকে ধরে ফেলেন। খবর পেয়ে সালিসকারী দুই ইউপি মেম্বার আসেন এবং ধর্ষকের মানসম্মান যাবে বলে ছাড়িয়ে নিয়ে যান। কিন্তু পরে কিশোরী কোনো গতি করেননি তারা।
গত পাঁচ দিন আগে ময়মনসিংহের নান্দাইলের ফুলবাড়িয়া চরপাড়া গ্রামে এ ধরনের ঘটনা ঘটে। ধর্ষক প্রেমিকের সাথেই বিয়ে হবে- এ অপেক্ষায় ছিল। কিন্তু পাঁচ দিন পর গত বৃহস্পতিবার আরেক সালিসের সিদ্ধান্ত মোতাবেক গতকাল শুক্রবার ওই কিশোরীকে গ্রাম ছাড়তে হয়। আর এখন পালিয়ে থাকা ধর্ষক বাড়ি ফিরেছে। এ ঘটনার কথা স্বীকার করেছেন সালিসের নেতৃত্বদানকারী ইউপি সদস্য হাদিস মিয়া ও মো. শাজাহান।
স্থানীয় সূত্র জানায়, নান্দাইল উপজেলার চন্ডীপাশা ইউনিয়নের উত্তর ফুলবাড়িয়া চরপাড়া গ্রামের ওই কিশোরি পাশের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আঠারবাড়ি এলাকার একটি বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে লেখাপড়া করে। বাবা-মা দুজনই জীবিকার তাগিদে ঢাকায় কাজ করেন। এ অবস্থায় দাদির আশ্রয়ে থাকা কিশোরিকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আঠারবাড়ি ইউনিয়নের দক্ষিণ বনগাঁও গ্রামের আব্দুল হাইয়ের ময়মনসিংহের একটি কলেজে অনার্সপড়ুয়া ছেলে আব্দুল হাকিম (১৯)। বিয়ের প্রলোভন দেখিতে সেদিন মেয়েটির সাথে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলে। ওই কিশোরি জানায়, করোনার মধ্যে স্কুল বন্ধ থাকায় বেশ কয়েকদিন ধরে হাকিম তার সাথে দেখা করার জন্য পীড়াপীড়ি করছিল। পরে গত ৩ জুলাই রাতে বাড়ির পেছন দিয়ে তার ঘরে প্রবেশ করে দরজা বন্ধ করে দেয়। এ সময় তাকে বিয়ের কথা বলে একাধিবার ধর্ষণ করে চলে যেতে চাইলে দুজনের মধ্যে কথাকাটাটি হয়। তার উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে ঝাপটে ধরে কিশোরী। টের পেয়ে বাড়ির লোকজন ঘরে প্রবেশ করে হাকিমকে আটকে দেয়।
কিশোরীর চাচা জানান, হাকিমকে আটকে রেখে রাতেই তার বাড়িতে খবর পাঠালে মান-সম্মান যাবে বলে হাকিমকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালায় তার পরিবারের লোকজন। এ অবস্থায় স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. শাহজাহান বিষয়টি ফয়সালার দায়িত্ব নিয়ে কয়েকজনকে ডেকে সালিসে বসেন। ওই সালিসে উপস্থিত ছিলেন পাশের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আঠারবাড়ি ইউনিয়নের ইউপি সদস্য হাদিস মিয়াসহ অনেকেই। জানা যায়, ওই সালিসের সিদ্ধান্ত হয় দুজনের বয়স না হওয়ায় এবং আটকে রাখলে অনার্সপড়ুয়া ছেলের মান-সম্মান যাবে- এই অজুহাতে ইউপি সদস্য হাদিস মিয়ার জিম্মায় বখাটেকে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। পর দিন রবিবার দুপুরে আটককৃত হাকিমকে নিয়ে যায় মেম্বার হাদিস। তবে কিশোরীর বিষয়ে কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। বৃদ্ধা দাদির কাছে একরকম অরক্ষিতই থেকে যায় মেয়েটি। ঘটনার একদিন পর ওই কিশোরীর বাড়িতে গেলে সে জানায়, আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই ‘প্রেমিক’ তাকে বিয়ে দেওয়া হবে- এমন সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছে সে। সালিসকারী ইউপি সদস্য হাদিস মিয়া ও শাহাজাহান বলেছিলেন, তারা আইনজীবীর সাথে কথা হয়েছে এবং তারা কাজী দিয়ে বিয়ে করানোর ব্যবস্থা করবেন।
এ অবস্থায় গতকাল শুক্রবার খোঁজ নিলে কিশোরীর এক চাচাতো ভাই জানান, ধর্ষক বিয়ে করতে রাজি না হওয়ায় কিশোরীর বাবা তার মেয়েকে নিয়ে ঢাকায় চলে গেছেন। এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে সালিসকারী হাদিস মিয়া বলেন, ইনশাল্লাহ, সব ভালোভাবেই শেষ হয়েছে। কীভাবে শেষ হয়েছে জানতে চাইলে মেম্বার হাদিস মিয়া বলেন, বয়স না হওয়ায় বিয়েটা সম্ভব হয়নি। তাই মেয়ে বাবার সাথে ঢাকায় যাবে কিশোরী। তবে দুজনের মধ্যে মোবাইলে সম্পর্ক থাকবে। ভাগ্যে থাকলে বিয়ে হবে। আরেক সালিসকারী মেম্বার শাজাহান জানান, দুই পরিবারের মধ্যে মীমাংসা হয়ে গেছে। কেমন মীমাংসা জানতে চাইলে শাজাহান বলেন, ছেলে মেয়ের বয়স হলেই তারা আত্মীয়তা করবে। এর মধ্যে কিশোরী গ্রাম ছেড়ে নানার বাড়ি কিশোরগঞ্জে থাকবে। আর ছেলে কোথায়- এমন প্রশ্ন করলে মেম্বার বলেন, ‘হেরে (অভিযুক্ত) তো গত বৃহস্পতিবার বাড়িতে আনছি।’