ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে সরকারি তালিকাভুক্ত ছোট-বড় হাট বাজারের সংখ্যা ৪২টি। তার মধ্যে চলতি বছর ২৪টি বাজারের বৈধ ইজারার ডাক হয়। বাকি ১৮টি বাজার প্রশাসন ইজারা দিতে না পারলেও ঠিকই কথিত ‘খাস কালেকশনের’ নামে টোল আদায় করা হচ্ছে। ফলে কোটি টাকার ওপরে রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। অন্যদিকে, ৯টি বাজারের বকেয়া প্রায় অর্ধকোটি টাকা। গত তিন মাসেও ওই সব বাজারের বরাদ্ধকৃত টাকা পরিশোধ করেননি ইজারাদাররা। মামলার কারণে দুটি বাজারের সকল কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও সপ্তাহে দু’দিন টোল আদায়ের লাখ লাখ টাকা ভাগ-বাটোয়ারা হচ্ছে।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বাজারগুলো বাংলা নতুন বছর শুরু হওয়ার আগে প্রশাসনের উদ্যোগে ইজারা ডাক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। সেই মোতাবেক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ১৪২৭ সালের শেষ দিকে এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে প্রশাসন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নির্দিষ্ট সময়ে বাংলা ১৪২৮ সালের জন্য ২৪টি বাজারের ইজারা প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। এর মধ্যে ১৫টি বাজারের ইজারামূল্য পরিশোধ করা হয়। বাকি ৯টি বাজারের ইজারামূল্য বিভিন্ন ছুতোয় পরিশোধ করেননি ইজারাদার।
উপজেলার খারুয়া ইউনিয়নের বনগ্রাম চৌরাস্থা বাজারটি ৩১ লাখ টাকায় ইজারা ডেকে নেন মো. খোকন মিয়া। কিন্তু তিনি মাত্র ১০ লাখ টাকা জমা দিয়ে গত আড়াই মাস ধরে বাজার থেকে টোল আদায় করছেন। জানতে চাইলে খোকন বলেন, করোনার কারণে বাজারে তেমন কোনো টোল আদায় হয় না। তাই দিতে পারছি না। চিন্তা করছি একটা আবেদন করে টাকা কমানোর জন্য।
১৫ লাখ টাকা দিয়ে বাকচান্দা বাজারের ইজারা ডেকে নিয়ে ১০ লাখ টাকা জমা দিয়েছেন ইজারাদার মো. ওমর ফারুক। বাকি টাকা পরিশোধের সময় চাইছেন। গতবারও তিনি করোনা সংক্রমণের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন। এবারও একই অবস্থা। তাই তিনি সময় চেয়ে আবেদন করবেন বলে জানান। নয়টি হাটের ইজারামূল্য প্রায় ১ কোটি সাড়ে ১২ লাখ টাকার মধ্যে ইজারাদাররা প্রায় ৪৯ লাখ টাকা জমা দিয়েছেন।
গত ১১ এপ্রিল ইউএনও এরশাদ উদ্দিন (বর্তমানে বদলি) চিঠি দিয়ে ইজারাদারদের জানিয়ে দেন সরকারি পাওনা পরিশোধ না করে বাজার থেকে খাজনা (টোল) আদায় করলে প্রয়োজনে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কিন্তু গত আড়াই মাস ধরে নয়টি বাজার থেকে টোল আদায় করা হচ্ছে বলে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সূত্রে জানা গেছে।
এ দিকে উপজেলার চণ্ডীপাশা ইউনিয়নের বাঁশহাটি ও জাহাঙ্গীরপুর ইউনিয়নের রায়পাশা কালীর বাজার নিয়ে মামলা থাকার কারণে বাজার দুটি সরকারিভাবে ইজারা ডাক হয়নি। কিন্তু স্থানীয় প্রভাবশালীরা এই দুটি বাজারে গরু-ছাগলের হাট বসিয়ে লাখ লাখ টাকা টোল আদায় করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। টোল আদায়ের লাখ লাখ টাকা কার পকেটে যাচ্ছে তা নিয়ে কেউ মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চণ্ডীপাশা ইউনিয়নের বাঁশহাটি বাজারের সাবেক একজন টোল আদায়কারী জানান, তিনি তিন মাস টোল আদায় করেছেন। প্রতিমাসে তিনি ইউএনও এরশাদ উদ্দিনকে ১ লাখ ২০ হাজার করে টাকা ছাড়াও আরও অর্ধালক্ষাধিক টাকা অনেককেই দিতে হয়েছে। তিনি বলেন, এই ধারাবহিকতা তো এখনও আছে। জাহাঙ্গীরপুর ইউনিয়নের রায়পাশা কালীর বাজারের টোল আদায় করছেন মো. আব্দুর রাশিদ নামে একজন। তিনি বলেন, দুই মাস পর পর ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা ইউএনওকে দিয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায় এই বাজারের আদায় করা টাকা সরকারী কোষাগারে জমা হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নবযোগদানকারী ইউএনও মোহাম্মদ আবুল মনসুর জানান, তিনি এ বিষয়ে খোঁজ খবর নেবেন।