গভীর রাতে কিশোরীর চিৎকারে প্রতিবেশীরা ঘরে প্রবেশ করে এক কলেজ পড়ুয়া ছাত্রকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন। পরে অভিযোগ করা হয়, ওই কিশোরীকে কলেজ ছাত্র একাধিবার ধর্ষণ করেছেন। পরে সালিসকারীরা ছাত্রের মানসম্মানের ভয় ও বয়স হলে বিয়ে দেওয়ার কথা বলে ছাড়িয়ে নেন। গত শনিবার রাতে এ ঘটনা ঘটলেও রাতভর সালিসের পর রবিবার দুপুরে অভিযুক্তকে ছাড়িয়ে নেন সালিসকারী দুই ইউপি সদস্য। এ ধরনের ঘটনাটি ঘটেছে ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার চন্ডীপাশা ইউনিয়নে।
খবর পেয়ে আজ সোমবার সকালে ওই গ্রামে গিয়ে জানা যায়, গ্রামের কিশোরী (১৪) পাশের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আঠারবাড়ি এলাকার একটি বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। বাবা-মা দুইজনই ঢাকায় কাজ করেন। এ অবস্থায় দাদির আশ্রয়ে থাকে ওই কিশোরী। ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আঠারবাড়ি ইউনিয়নের দক্ষিণ বনগাঁও গ্রামের আব্দুল হাইয়ের ময়মনসিংহের একটি কলেজে অনার্স পড়ুয়া ছেলে আব্দুল হাকিমের (১৯) সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। একপর্যায়ে বিয়ের প্রলোবনে তার সঙ্গে গভীর সর্ম্পক গড়ে তুলে।
ওই কিশোরী জানায়, করোনার মধ্যে স্কুল বন্ধ থাকায় বেশ কয়েকদিন ধরে হাকিম তার সঙ্গে দেখা করার জন্য বলে। পরে গত শনিবার রাতে বাড়ির পিছন দিয়ে তার ঘরে প্রবেশ করে দরজা বন্ধ করে দেয়। দেখা করার পর চলে যেতে চাইলে দুইজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। বাড়ির লোকজন শুনতে পেয়ে ঘরে প্রবেশ করে হাকিমকে আটকে দেন। ওই কিশোরীর অভিযোগ, শনিবার রাতে তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করেন ওই অভিযুক্ত।
কিশোরীর চাচা জানান, হাকিমকে আটকে রেখে রাতেই তার বাড়িতে খবর পাঠালে মানসম্মান যাবে বলে হাকিমকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালায় পরিবারের লোকজন। এ অবস্থায় স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. শাহজাহান বিষয়টি ফয়সালার দায়িত্ব নিয়ে কয়েকজনকে ডেকে সালিসে বসেন। ওই সালিসে উপস্থিত ছিলেন পাশের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আঠারবাড়ি ইউনিয়নের ইউপি সদস্য হাদিস মিয়াসহ অনেকেই।
জানা যায়, ওই সালিসের সিদ্ধান্ত হয় দুই জনের বয়স না হওয়ায় এবং আটকে রাখলে অনার্স পড়ুয়া ছেলের মান সম্মান যাবে এই জন্য ইউপি সদস্য হাদিস মিয়ার জিম্মায় অভিযুক্তকে ছেড়ে দেওয়া হবে। এই সিদ্ধান্তে গতকাল রবিবার দুপুরে আটককৃত হাকিমকে নিয়ে যায় মেম্বার হাদিস। তবে কিশোরীর বিষয়ে কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। বৃদ্ধা দাদির কাছে এক রকম অনিরাপত্তায় রয়েছে ওই কিশোরী।
সালিসকারী শাহাজান মেম্বার জানান, বয়স কম হওয়ায় উকিলের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা আগামী রবিবার আদালতে নিয়ে যেতে বলেছেন। সেখানে এফিডেফিট করে বয়স বাড়িয়ে কোর্ট ম্যারেজ করানো হবে। শেষে ছেলে পক্ষ রাজি থাকবে কি না এ বিষয়টা নিয়েও তাঁর সন্দেহ রয়েছে।
সালিসে উপস্থিত ছিলেন ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আঠারবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. হাদিস মিয়া। তিনি বলেন, ‘দুই জনেরই বয়স কম। অন্যায় তো করছেই তাই বয়স হয়লেই বিয়ের কাজটা করবাম। এই সিদ্ধান্তেই আমি ছেলেটাকে ছাড়াইয়া আনছি।’ ধর্ষণের ঘটনা তো সালিস হয় না এমন প্রশ্ন করলে মেম্বার বলেন, ‘দুইজনের মধ্যে যেহেতু গভীর সর্ম্পক আছিন তাই একটু হইলে তো হইতেই পারে। ’
নান্দাইল থানার ওসি মিজানুর রহমান আকন্দ জানান, বিষয়টির খোঁজ খবর নিচ্ছি। অভিযোগ পেলেই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।