টাঙ্গাইলের মির্জাপুর পৌর এলাকার অতি জনগুরুত্বপূর্ণ কুমুদিনী হাসপাতাল ও বংশাই রোডে ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টির পানি জমে জনদুর্ভোগ চরম পৌঁছেছে। বৃষ্টি হলেই পুরাতন বাসস্ট্যান্ড থেকে হাসপাতালে যাওয়ার সম্পূর্ণ সড়কে হাঁটু পানি জমে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে।
গত কয়েক দিনের একাধিকবার এবং বুধবারের বৃষ্টিতে হাসপাতালে আসা ও ভর্তি থাকা রোগী এবং তাদের স্বজনদের পাশাপাশি চিকিৎসক নার্স মেডিক্যাল কলেজ ও ভারতেশ্বরী হোমসের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীসহ ওই সড়ক দিয়ে চলাচলকারীদের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে।
এ ছাড়া মির্জাপুর বাজারের মেইন রোড ও কলেজ রোডে ড্রেনেজ ব্যবস্থা থাকলেও পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় ড্রেনের দুর্গন্ধযুক্ত পানি রাস্তায় জমে জনদুর্ভোগ শুরু হয়েছে। অন্যদিকে বংশাই রোডে ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় ওই সড়কের ৫০ গজ রাস্তায় হাঁটু পানি জমে থাকছে। এতে ওই সড়ক দিয়ে চলাচলরত হাজারো মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
জানা গেছে, আর্তমানবতার সেবায় দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা প্রতিষ্ঠিত এক হাজার ৫০ শয্যার কুমুদিনী হাসপাতালে প্রতিদিন চিকিৎসা নিতে মির্জাপুর উপজেলা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে দুই থেকে তিন হাজার মানুষ আসে। এ ছাড়া হাসপাতাল কমপ্লেক্সে রয়েছে কুমুদিনী উইমেন্স মেডিক্যাল কলেজ, ভারতেশ্বরী হোমস, কুমুদিনী নার্সিং স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
উপজেলার দক্ষিণাঞ্চলের ২৫ থেকে ৩০টি গ্রামের মানুষও লৌহজং নদী পার হয়ে কুমুদিনী হাসপাতাল রোড হয়ে উপজেলা সদর সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আসা-যাওয়া করে থাকে। আধা কিলোমিটারেরও কম দৈর্ঘ্যের সড়কটিতে ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় একটু বৃষ্টি হলেই হাঁটু পানি জমে যায়।
বৃহস্পতিবার দুপুর দুইটার দিকে কুমুদিনী হাসপাতাল রোড সরেজমিনে মানুষের দুর্ভোগের চিত্র দেখা গেছে। বৃষ্টিতে ভিজে মানুষজন হাঁটু পানির মধ্যেও চলাচল করছে। এদিকে বংশাই রোড ও মেইন রোডের পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
হাসপাতালে ভর্তি রোগীর স্বজন থলপাড়া গ্রামের সজল ও এজাজ জানান, গত কয়েক দিন ধরেই বৃষ্টি হচ্ছে। তাতেই সড়কে চলাচল কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। লকডাউন থাকায় রিকশাও চলাচল করছে না। তারা দুর্গন্ধযুক্ত পানিতে ভিজে হেঁটে হাসপাতালে আসছি।
হাসপাতাল রোডের ব্যবসায়ী সরোয়ার হোসেন, মাসুদ মিয়া, সোহেল মিয়া, রঞ্জন বনিক জানান, বৃষ্টি বেশি হলে সড়ক তলিয়ে যায়। রোগী, স্বজন ও ব্যবসায়ীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
বংশাই রোডে ব্যবসায়ী ফজলু মিয়া, মোটরসাইকেল চালক রাজীব, অটোরিকশাচালক আল আমিন জানান, এই রাস্তা দিয়ে উত্তর মির্জাপুরের হাজারো মানুষ প্রতিদিন চলাচল করে থাকে। দীর্ঘদিন পর রাস্তা পাকা করণ হলেও ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টির মধ্যে হাঁটু পানি জমে। এতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকার ব্যবসায়ী শফি মিয়া, আশ্রব আলী শিকদার, মোজাম্মেল হোসেন, উত্তমসহ অনেকেই জানান, ড্রেন ভরাট হওয়ায় পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। ফলে ড্রেনের দুর্গন্ধযুক্ত পানি রাস্তায় জমে থাকছে। গন্ধে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বসে থাকা কষ্টের। এ ছাড়া বাজার ও মসজিদে চলাচলকারী মানুষের পড়নের কাপড়ও নষ্ট হচ্ছে।
হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক পবন কুমার জানান, আধা কিলোমিটারের কম দৈর্ঘ্য সড়কে ড্রেন না থাকায় বৃষ্টি মৌসুমে তাদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছে।
মির্জাপুর উপজেলা প্রকৌশলী আরিফুর রহমান জানান, সড়কটি পৌরসভার ভেতরে সে জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর রাস্তাটির ড্রেন নির্মাণ করতে পারবে না। সড়কটি অতি জনগুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় ড্রেন নির্মাণে স্থানীয় সংসদ সদস্যের সুপারিশে পৌরসভায় বিশেষ প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
মির্জাপুর পৌরসভার মেয়র সালমা আক্তার শিমুল বলেন, শুধু হাসপাতাল রোড নয়, পৌরসভার বিভিন্ন স্থানে ড্রেন নির্মাণের জন্য প্রকল্প দেওয়া হয়েছে। প্রকল্প অনুমোদন হলেই ড্রেন নির্মাণের কাজ শুরু হবে। আর যেসব ড্রেন ভরাট হয়ে গেছে, তা পরিস্কারের কাজ করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।