দেশব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রকোপের পর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ছিল। গত মাসে মহামারীর প্রকোপ কিছুটা কম থাকায় ইউজিসির অনুমতি নিয়ে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেওয়া শুরু করে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আবারও করোনার প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকারিভাবে লকডাউন ঘোষণার কারণে স্থগিত হয়ে গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল পরীক্ষা। দূরপাল্লার পরিবহন ব্যবস্থাও বন্ধ। বাড়ি যাওয়া নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় ছিল শিক্ষার্থীরা। তাদের অভিভাবকরাও ছিলেন উদ্বিগ্ন। এমনি পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে করে প্রত্যেক বিভাগীয় শহরে পৌঁছে দেওয়ার ঘোষণা দেন উপাচার্য প্রফেসর ড. এ এইচ এম মোস্তাফিজুর রহমান।
ভিসির নির্দেশনায় ক্যাম্পাসে আটকে পড়া শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়িতে করে বাড়ি বাড়ি পৌঁছানোর ব্যবস্থা করে দিল প্রশাসন। সোমবার সকাল থেকেই শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিভাগীয় শহরগুলোতে রওয়ানা দেয় বাসগুলো। এ সময় শিক্ষার্থীদের চোখে মুখে স্বপ্ন ভাঙার ছাপ আর মলিন চেহারা নিয়েই ফিরে যায় বাড়িতে।
জানা যায়, করোনাকালেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষাগুলো শুরু হয়েছিল গত ১৩ জুন। শিক্ষার্থীদের হল ও পরিবহন বন্ধ থাকলেও আশপাশের মেছে গাদাগাদি করে অবস্থান নিয়ে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে ময়মনসিংহ বিভাগের ১১টি এলাকায় করোনার ঊর্ধ্বগতির কারণে লকডাউন ও ক্যাম্পাসের ৮ শিক্ষার্থী আক্রান্ত হওয়ায় পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী স্বর্ণা বলেন, আমরা দুবছরের সেশনজটে আটকে আছি। এরই মধ্যে পরীক্ষার কথা শুনে বাড়ি থেকে ভেঙে ভেঙে ক্যাম্পাসে এসেছি। ডাবল ভাড়া দিয়ে মেস ভাড়া করে থাকলেও পরীক্ষার আর দেওয়া হলো না। জানি না কবে অনার্স জীবন শেষ করে বাবা মাকে সুখবর শুনাতে পারব।
পরিবহন প্রশাসক ড. মো. আরিফুর রহমান বলেন, দেশের সাতটি বিভাগীয় শহরে আমাদের ১৫টি বাসে প্রায় ৮ শতাধিক শিক্ষার্থী স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাড়ি যাচ্ছে। এখন তারা নিরাপদে বাসায় পৌঁছাক সেটাই আমাদের চাওয়া।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর উজ্জল কুমার প্রধান বলেন, গত ১৩ জুন যথাযথ স্বাস্থবিধি মেনে আমরা পরীক্ষা শুরু করলেও ইতিমধ্যে আমাদের ক্যাম্পাসের আটজন শিক্ষার্থী আক্রান্ত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে আমরা তাদের যথাযথ চিকিৎসা ও তদারকি করে যাচ্ছি। এরই মধ্যে করোনার ঊর্ধ্বগতি হওয়ায় পরীক্ষা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এ এইচ এম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের অভিভাবক। অভিভাবকের অন্যতম দায়িত্ব সন্তানদের খোঁজ খবর রাখা। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সেই দায়বদ্ধতা থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আটকে পড়া শিক্ষার্থীদের বাড়ি পৌঁছে দিতে সহায়তা করেছে।