ছেলের ব্যবসায়ী পার্টনার হয়ে ব্যাংক কর্মকর্তা মা আজিজুন নাহারের পেনশনের ৩০ লাখ টাকাসহ মোট ১২ জন যুবকের কাছ থেকে পৌনে দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়েছেন প্রতারক ফজলে রাফি আকন্দ বিশাল (২৮) নামের এক যুবক। এ ঘটনায় বিশাল ও তার ভাই ফজলে মুক্কী আকন্দ জয়কে (২২) আসামি করে জামালপুর সদর থানায় মামলা দায়ের করেছেন ওই অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তার ছেলে আরিফুল ইসলাম বাবু। পুলিশ জয়কে গ্রেপ্তার করেছে। মামলার আসামি প্রতারক দুই সহোদর জামালপুর শহরের উত্তর কাছারীপাড়া এলাকার মৃত আলী হায়দার আকন্দের ছেলে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, জামালপুর শহরের কাছারীপাড়ার ভুক্তভোগী আরিফুল ও প্রতারক বিশাল উভয়ে প্রতিবেশী এবং বন্ধু। বিশাল মূলত তার রাফি এন্টারপ্রাইজ নামে ঠিকাদারি ব্যবসা করেন। আরিফুলের সাথে পরিচয়ের সূত্র ধরে বিশাল তাদের বাসায় যাতায়াত করে আরিফুলের মা জনতা ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজিজুন নাহারকে মায়ের মতো শ্রদ্ধা ও সম্মান করে দিনে দিনে সম্পর্কটা আরো গভীর করে তুলেন। একপর্যায়ে গাড়ি বেচাকেনার ব্যবসায় আরিফুলকে যুক্ত করে অধিক মুনাফা অর্জনের প্রলোভন দেখায় বিশাল। প্রতারণার ফাঁদে পড়ে আরিফুল তার বাবাকে বুঝিয়ে তার মায়ের পেনশনের ৩০ লাখ টাকাসহ মোট ৫৮ লাখ টাকা বিশালকে দেন।
গত বছরের ১৫ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে একই কায়দায় আরিফুল ও জামালপুর শহরের বিভিন্ন এলাকার আরো ১১ জন যুবকের কাছ থেকে মোট এক কোটি ৮৭ লাখ ৪৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়ে গা ঢাকা দেন বিশাল। বিশ্বাস অর্জনের জন্য সবাইকে স্ট্যাম্পে দু’পক্ষের স্বাক্ষরসহ চুক্তি ও ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনের জন্য অগ্রিম চেকও লিখে দেন বিশাল।
অন্যান্য ভুক্তভোগীদের মধ্যে মিয়াপাড়ার ইমরান আনছারীর কাছ থেকে তিন লাখ টাকা, শহীদ হিরু সড়কের মাহমুদুল হাসানের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা, পলাশগড়ের রোকনের কাছ থেকে সাত লাখ টাকা, দয়াময়ীপাড়ার রাকিবুলের কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা, একই এলাকার নাহিয়ান মাহমুদের কাছ থেকে ১১ লাখ টাকা, দাপুনিয়া এলাকার শাকিবের কাছ থেকে সাত লাখ টাকা, মুসলিমাবাদের সুমন কুমারের কাছ থেকে ১৯ লাখ ৭৫ হাজার টাকা, মুন্সিপাড়ার রিফাত ফারুকীর কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা, বোসপাড়ার পলাশ ঘোষের কাছ থেকে ১৫ লাখ ১০ হাজার টাকা, একই এলাকার শামীম হোসাইনের কাছ থেকে ৬০ হাজার টাকা এবং দেওয়ানপাড়ার প্রতীক নাগের কাছ থেকে সাত লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন প্রতারক বিশাল।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী আরিফুল বাদী হয়ে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা আত্মসাত ও পরবর্তীতে হুমকি দেওয়ার অভিযোগে প্রতারক বিশাল ও তার ভাই জয়কে আসামি করে গত ১৬ জুন জামালপুর সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার আরজিতে ভুক্তভোগী আরিফুল তার টাকার পরিমাণসহ অন্যান্য ১১ জনের নাম ও টাকার পরিমাণ উল্লেখ করেছেন। একই সাথে ভুক্তভোগী ওই ১১ জন যুবকে মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে। মামলাটি দায়েরের পর সদর থানা পুলিশ প্রতারক বিশালের ছোট ভাই জয়কে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠিয়েছে। কিন্তু এলাকা ছেড়ে পলাতক প্রতারক বিশালকে আজো গ্রেপ্তার করতে পারেনি সদর থানা পুলিশ।
এদিকে, আজ রবিবার সকালে স্থানীয় একজন সাংবাদিকের ব্যক্তিগত কার্যালয়ে বিশালের প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগী যুবকরা সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে মামলাটির বাদী ভুক্তভোগী আরিফুল ও তার মা অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা আজিজুন নাহারসহ ভুক্তভোগী সবাই উপস্থিত ছিলেন।
অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা আজিজুন নাহার এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, বিশালকে আমার নিজের সন্তানের মতো বিশ্বাস করেছিলাম। আমার ছেলের বন্ধু হিসেবে তাকে অনেক আদর করতাম। তাই আমার ছেলের কথামতো যৌথ ব্যবসায় খাটানোর জন্য তাকে আমার পেনশনের ৩০ লাখ টাকাসহ মোট ৫৮ লাখ টাকা দেই। পরে শুনেছি যে বিশাল আরো বেশ কয়েকজন যুবকের কাছ থেকে একই কায়দায় টাকা নিয়ে আর দেয়নি। বর্তমানে সে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে। বিশাল আমার সংসার ধ্বংস করে দিয়েছে। এতোগুলো টাকা ফেরত না পেয়ে আমি স্বামী ও দুই সন্তান নিয়ে খুবই কষ্টে দিন কাটাচ্ছি।
বিশাল পলাতক থাকলেও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দিয়ে মামলাটি তুলে নেওয়ার জন্য বিশাল ভুক্তভোগী সবাইকে হুমকি দিয়ে আসছে বলেও তারা সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন। তারা অবিলম্বে বিশালকে গ্রেপ্তার করে টাকাগুলো ফেরত পাওয়ার ব্যবস্থা করাসহ প্রতারক দুই ভাইয়ের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা জামালপুর সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মিজানুর রহমান আজ রবিবার বিকেলে বলেন, বাদীর অভিযোগ পাওয়ার দিনই মামলাটির দুই নম্বর আসামি ফজলে মুক্কী আকন্দ জয়কে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে তাকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। মামলাটির প্রধান আসামি ফজলে রাফি আকন্দ বিশাল পলাতক রয়েছেন। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।