কিশোরের বয়স ১৩ কি ১৪ হবে। ময়মনসিংহের নান্দাইল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিছানায় শুয়ে ব্যথার কাতরাচ্ছে। খবর পেয়ে সোমবার বিকেলে গিয়ে জানা যায়, নান্দাইল উপজেলায় অবস্থিত নিজ বাড়ির পাশের কেন্দুয়া উপজেলার এক বাজারের বিকাশের দোকানদার তাকে আটকে রাখে এবং বেশ কজন তাকে মারধর করে আহত করে। ফের মারধরের আশঙ্কায় পাশে কেন্দুয়া হাসপাতালে না গিয়ে ১৫ কিলোমিটার দূরে এ হাসপাতালে ভর্তি হয় সে।
আহত কিশোর নান্দাইল উপজেলার গাঙাইল ইউনিয়নের সুন্দাইল গ্রামের মৃত ফজলু মিয়ার ছেলে বিল্লাল হোসেন। হাসপাতালে কিশোরের কাছে আছেন মা কমলা খাতুন। জ্বরে কাঁপছে বিল্লাল। সারা শরীরজুড়ে মারধরের দাগ। ডান হাতে ছয়টি সেলাই।
বিল্লাল জানায়, কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার একটি মাদরাসায় পড়ে। তাঁর একটি মুঠোফোন আছে। ওই মুঠোফোনে টাকা লেনদেনের বিকাশ ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট খোলা আছে। গত শুক্রবার ঢাকা থেকে এক অজ্ঞাত ব্যক্তি তাকে ফোন করে বিকাশের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে তাঁর (বিল্লাল) অ্যাকাউন্টের গোপন পিন নম্বর জেনে নেয়। পরে ওই ব্যক্তি জানায় সে (বিল্লাল) ১০ লাখ টাকা পুরস্কার পেয়েছে। কিন্তু টাকা পেতে হলে ১৪ হাজার টাকা নিজের বিকাশ অ্যাকাউন্টে রাখতে হবে। এ কথা শুনে সে পাশের নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার পাইকুড়া বাজারের বিকাশ এজেন্ট মোহাম্মদ আলীর দোকানে গিয়ে নিজের অ্যাকাউন্টে ১৪ হাজার টাকা পাঠায়। ওই সময় তার মুঠোফোনে টাকা প্রবেশের সংকেত গেলেও অ্যাকাউন্টে কোনো টাকা যোগ হয়নি। বিল্লাল দোকানিকে এ কথা জানানোর পর বিকাশ এজেন্ট মোহাম্মদ আলী মাস্টার তাঁকে ধরে একটি কক্ষে বেঁধে রেখে নির্যাতন করে। এ সময় সে রক্তাক্ত হয়ে পড়লেও তাকে দোকানের ভেতরে আটকে রাখা হয়। এ খবর পেয়ে সেখানে যান স্থানীয় ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান বদরুল ইসলাম। তিনিও কিছু না জেনে না বুঝে মাথা চেপে ধরে দেয়ালে ঠুকে দেয়। পরে খবর পেয়ে তাঁর (বিল্লাল) মামা জুয়েল মিয়া বিকাশ এজেন্টকে ১৪ হাজার ৬৫০ টাকা পরিশোধ করে তাকে ছাড়িয়ে আনেন।
কমলা খাতুন জানান, আবারও মারধরের ভয়ে তিনি ছেলেকে কেন্দুয়া হাসপাতালে না নিয়ে নান্দাইল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এনে ভর্তি করেছেন। তিনি তাঁর ছেলের শরীরে থাকা ক্ষতচিহ্নগুলো দেখিয়ে কেঁদে কেঁদে বলেন, ‘স্যার আমরা নিরীহ মানুষ। এর লাইগ্যা বিচার পাইছি না। অহন যদি কেন্দুয়ার থানাত গিয়া বিচার চাই তাঅইলে আমরারেও মারবো।’
এ ঘটনায় জানতে চাইলে বিকাশের দোকানের মালিক মোহামস্মদ আলী মাস্টার বলেন, ‘এ (কিশোর) একটা বাটপার। বোকাজ মাইর্যা টাকা নিতে গা চাইছিল। এটা জানার পর পাবলিক কিছু (মারধর) দিছে। আমি মারছি না।’
পাইকুড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান বদরুল ইসলাম শিশুটিকে মারধরের কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘তখন তো পাবলিক সেন্টিমেন্টাল ছিল। আমি গিয়ে মাইর ফিরাইছি। পরে টাকা পরিশোধ করলে সান্ত্বনা দিয়া ছাইর্যা দেওয়ার ব্যবস্থা করছি।’
কেন্দুয়া থানার ওসি কাজী শাহেনেওয়াজ বলেন, ‘পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ পেলেই তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’