নেত্রকোনার মদনের এক প্রতিবন্ধী তরুণীর ‘ইজ্জতের মূল্য’ এক লাখ ৫০ হাজার টাকা মাতুব্বররা আত্মসাত করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিচার চেয়ে অবশেষে ওই প্রতিবন্ধী তরুণী একটি ধর্ষণ মাললা দায়ের করেছেন। পরে গতকাল বুধবার ওই তরুণীর ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে পুলিশ।
জানা যায়, উপজেলার মাঘান গ্রামের এক প্রতিবন্ধী তরুণীর সঙ্গে মাঘান কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি নাজমুলকে গত ১৩ এপ্রিল রাতে আপত্তিকর অবস্থায় আটক করে স্থানীয়রা। নাজমুল ওই এলাকার মাঘান ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলামের (আন্ছু ডাক্তার) ছেলে। এরপর নাজমুলকে ওই তরুণীর বাড়িতে আটকে রাখে স্থানীয়রা। পরদিন ৯৯৯-এ ফোন দিলে পুলিশ এসে ঘটনাস্থল থেকে কাউকে উদ্ধার করতে পারেনি।
স্থানীয় মাতুব্বররা বিষয়টি মীমাংসা করার জন্য ওইদিন রাতেই মাঘান গ্রামের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানের বাড়িতে সালিসে বসেন। পরে ওই প্রতিবন্ধীর ‘ইজ্জতের মূল্য’ এক লাখ ৫০ হাজার টাকা ধার্য করেন তারা। নাজমুলের বাবা ধার্যকৃত টাকা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানের ভাই রফিকুলের হাতে দিয়ে ছেলেকে নিয়ে বাড়ি চলে যায়। ওই টাকা প্রতিবন্ধী তরুণীকে না দিয়ে মাতুব্বরগণ নিজেরা আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগ তরুণীর।
এ ঘটনায় বিচার চেয়ে ৩ জুন ওই প্রতিবন্ধী তরুণী বাদী হয়ে নাজমুলকে আসামি করে নেত্রকোনার আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেছেন।
ভুক্তভোগী ওই তরুণী বলেন, নাজমুল গভীর রাতে বসত ঘরে ঢুকে আমার সঙ্গে জোড়পূর্বক অনৈতিক কাজে লিপ্ত হয়। এ সময় আশপাশের লোকজন বিষয়টি টের পেয়ে তাকে আটক করে। ওই রাত ও পরদিন নাজমুলকে আমার বাড়িতে আটকে রাখা হয়। পরে মাতুব্বর ও পুলিশ এসে নাজমুলকে নিয়ে যায়। আমাদেরকে ভয় দেখিয়ে সালিসে বসে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে আমাকে কিছুই না দিয়ে নিজেরা (মাতুব্বরগণ) টাকা নিয়ে চলে যায়। আমি বিচার চেয়ে আদালতে মামলা করেছি।
মদন থানার এসআই মাসুদ জামালী জানান, ঘটনার দিন ৯৯৯ নাম্বারে ফোন পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। এ সময় কাউকে উদ্ধার করতে না পারায় থানায় চলে আসি।
সালিসে উপস্থিত মাতুব্বর সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর বলেন, ‘ঘটনাটি স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করেছিলাম। জরিমানার এক লাখ ৫০ হাজার টাকা আদায় করে কুলিয়াটি গ্রামের আমার ভাগ্নে তায়েবের কাছে রেখেছে বলে আমি শুনেছি।’
সালিসের আরেক মাতুব্বর রফিকুল ইসলাম জানান, জরিমানার এক লাখ ৫০ হাজার টাকা আমার ভাগ্নে কুলিয়াটি গ্রামের তায়েবের কাছে রাখছি। কিন্তু সে ভুক্তভোগীর পরিবারকে টাকা না দিয়ে নিজেই আত্মসাত করেছে।
মদন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস আলম জানান, ওই তরুণীর ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। মামলাটি তদন্তাধীন আছে।