নেত্রকোনার সীমান্ত উপজেলা দুর্গাপুরে হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে ৩৩৩-এ কল করে খাদ্য চাওয়া মানুষের সংখ্যা। সীমান্তের দুটি ইউনিয়ন থেকে প্রতিদিন খাদ্য সহায়তা চেয়ে ফোন যাচ্ছে ৩০ থেকে ৫০ জনের।
উপজেলা প্রশাসন থেকে নিয়মিত তাদের করা হচ্ছে খাদ্য সহায়তা। করোনা পরিস্থিতির কারণে বিষয়টি আশঙ্কাজনকহারে বেড়ে যাওয়ায় তাদের কর্মসংস্থানে বিষয়টি ভাবছে জেলা প্রশাসন।
স্থানীয় এলাকাবাসী ও প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, দুর্গাপুর সীমান্তের কোল্লাগড়া এবং দুর্গাপুর সদর ইউনিয়নের নির্দিষ্ট দুটি এলাকা থেকে প্রতিদিন চাওয়া হচ্ছে খাদ্য সহায়তা। জাতীয় কল সেন্টারে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ ফোন করে খাদ্য সঙ্কটের কথা বলছেন। উপজেলা প্রশাসন থেকে তাদের খাদ্য সরবরাহ করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার (৮ জুন) বিকেলে দুর্গাপুর উপজেলা পরিষদে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ৬০ থেকে ৭০ জন উপকারভোগী মানুষ সামাজিক দূরত্বে লাইনে দাঁড়িয়ে খাবার সংগ্রহ করছেন। প্রতি জনকে দেয়া হচ্ছে- ১০ কেজি চাল, এক কেজি পেঁয়াজ, দুই কেজি আলু, এক কেজি ডাল, এক কেজি চিনি, এক লিটার তেল, এক প্যাকেট নুডলস ও মুড়ি দেয়া হয়।
উপকারভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, করোনা পরিস্থিতিতে কাজ হারিয়ে পরিবার নিয়ে তারা পড়েছেন বিপাকে। টিভিতে দেখে সরকারের দেয়া ৩৩৩ নম্বরে খাদ্য সমস্যার কথা জানিয়ে ফোন করে খাদ্য সামগ্রী সংগ্রহ করছেন।
কোল্লাগড়া ইউনিয়নের একটি আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা আঁখি রিছিল বলেন, ‘আমরা খুব কষ্টে আছি। সীমান্তের পাহাড়ে কাঠ কেটে লাকড়ি কুঁড়িয়ে জীবনযাপন করতাম। এখন সীমান্তে লকডাউন চলছে। ওইদিকে যেতে দেয় না বিজিবি। পরে পাশের বাড়িতে টিভিতে দেখলাম ৩৩৩ নম্বরে ফোন করলে খাবার পাওয়া যায়। তাই ফোন করেছিলাম। তারা খাবার নিতে যেতে বলেছে। আমি তাই এসেছি। খাবার নিয়ে যাচ্ছি।’
উপজেলার কোল্লাগড়া গোচ্ছগ্রামের বাসিন্দা এপ্রিল তাম্বুগং, দিপালি হাজং, ত্রাপিট রেমা বলেন, আমরা পরিবারের লোকদের খাদ্য দিতে পারছিলাম না। খাবার নিয়ে কষ্ট করছিলাম। প্রতিবেশীদের কাছে শুনে ৩৩৩ নম্বরে ফোন করি। তারা অনেক কিছু জিজ্ঞাসা করে। আমরা উত্তর দিই। শেষে আমাদের খাদ্য সামগ্রী দেয়ার আশ্বাস দেন। পরে ইউএনও অফিস থেকে আমাদের ফোন করে খাবার দিয়েছে। খাবার পেয়ে আমরা খুব খুশি।
এ বিষয়ে বুধবার (৯ জুন) দুর্গাপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রথম দিকে একজন দুজন করে এই সহযোগিতা চাইতো। এখন প্রতিদিন ৩০-৫০ জন ফোন করে যোগাযোগ করছে। একজনের কাছে থেকে শুনে আরেকজন ফোন করছে। এর সংখ্যা বাড়তে থাকলে আমরা সমস্যায় পড়ব।’
দুর্গাপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাজীব উল আহসান বলেন, ‘এর মূল কারণ হচ্ছে দুর্গাপুর ১ নম্বর বালুঘাটটি বন্ধ রয়েছে। এজন্য অনেক মানুষ কর্মহীন হয়ে গেছে। ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর মানুষজন পাহাড় থেকে কাঠ/লাকড়ি সংগ্রহ করে জীবন জীবিকা চালাতেন। করোনা পরিস্থিতির কারণে তারা সঙ্কটে পড়ে খাবার চাইছেন। আমরা সরকারের নির্দেশনা মতে, তাদের কাছে খাবার পৌঁছে দিচ্ছি। যারা সমস্যায় পড়বেন, আমাদের জানালে আমরা সহযোগিতা করব।’
নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক কাজি মো. আবদুর রহমান বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনা মতে আমরা তাদের মাঝে খাদ্য সরবরাহ করে যাচ্ছি। পাশাপাশি ভাবছি, যারা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন তাদের কর্মসংস্থান নিয়েও। যাতে তারা এই সঙ্কট থেকে উত্তরণ হতে পারে, আমরা সেই চেষ্টা করছি।’