ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁকডাকে সকাল থেকেই সরগরম হয়ে ওঠে কিশোরগঞ্জ শহরের বড়বাজার। প্রতিদিন এ পাইকারি বাজারে কোটি টাকার সবজি বিক্রি হয়।
তবে সরবরাহ কম হলেও কিশোরগঞ্জে কমে গেছে সব ধরনের সবজির দাম। কম দামে সবজি কিনতে পেরে খুশি ব্যবসায়ীরা। এতে লোকসানে পড়তে হচ্ছে চাষিদের। এদিকে সাধারণ মানুষ বলছেন, পাইকারি বাজারে সবজি কম দামে বিক্রি হলেও গ্রামের ছোট বাজারে কিনতে হচ্ছে বেশি দামে।
কিশোরগঞ্জ শহরের বড়বাজারে প্রতিদিন ভোরে জমজমাট বেচাকেনা হয় সবজির। তবে করোনা মহামারিতে সরকারি বিধিনিষেধ থাকায় পাইকাররা আসতে পারছেন না বাজারে। এতে কমে গেছে সবজির দাম। সরবরাহ কম থাকার পরও তাই কম দামে সবজি বিক্রি করতে হচ্ছে চাষিদের। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা।
জানা যায়, প্রায় ১০০ বছরের পুরোনো এ বাজারে প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে ৯টা পর্যন্ত পাইকারি দরে সবজি বেচাকেনা হয়। ভরা মৌসুমে বাজারে প্রতিদিন ৮০ থেকে এক কোটি টাকার সবজি বেচাকেনা হয়। বাজারের ৫০টি আড়তের মাধ্যমে এসব সবজি বেচাকেনা হয়ে থাকে।
কিশোরগঞ্জ ছাড়াও ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের নানা প্রান্তের পাইকাররা এ বাজার থেকে সবজি কিনে নিয়ে যান। তবে বর্তমানে আশপাশের কয়েকটি উপজেলায় একই সময় সবজির হাট বসায় দিন দিন কমে যাচ্ছে সবজির কেনাবেচা।
বাজারের আলাউদ্দিন ট্রেডার্সের ম্যানেজার হিরেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ বলেন, ‘যুগ যুগ ধরে চলে আসা প্রসিদ্ধ এ বাজারটি এখনও তার ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। তবে পাকুন্দিয়া উপজেলার তারাকান্দি ও বাজিতপুরের পিরিজপুর এলাকায় একই সময় বাজার বসায় এ বাজারে বাইরের সবজির আমদানি ও পাইকার অনেক কমে গেছে’।
সোমবার (৭ জুন) ভোরে বড়বাজার এলাকায় সবজির বাজার ঘুরে দেখা যায়, ভোরের আলো ফোটার আগেই দূর-দূরান্তের কৃষকরা ট্রাক, পিকআপ, অটোরিকশাসহ ছোট ছোট যানবাহনে করে বিভিন্ন জাতের টাটকা সবজি বাজারে নিয়ে আসছেন। দরদাম করে এগুলো কিনে নিচ্ছেন ক্ষুদ্র সবজি ব্যবসায়ীরা। তাই সকাল থেকেই মুখর বড়বাজার এলাকার এ বাজার।
পাইকারি এ বাজারে পাওয়া যাচ্ছে করলা, টমেটো, কাকরোল, ঝিঙ্গা, চিচিংগা, বেগুন, লাউ, বরবটিসহ সব ধরনের সবজি।
বাজারে আলু ১৫ টাকা, বেগুন ১৫ টাকা, করলা ৪০ টাকা, কাকরোল ৩৫ টাকা, চিচিঙ্গা ৩০ টাকা, পেঁপে ২৫ টাকা, শশা ২০ টাকা, পটল ২০ টাকা ও আলু ১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
কমেছে এসব সবজির দাম। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন চাষিরা। এদিকে খুচরা বাজারে বিক্রি কম হওয়ায় বেশি সবজি কিনতে পারছেন না বলে জানান ক্রেতারা।
কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার বৌলাই এলাকার চাষি মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমি এ বাজারে সবজি বিক্রি করি। স্থানীয় বাজারের তুলনায় এখানে দাম একটু বেশি পাওয়া যায়। এছাড়া ক্রেতা বেশি থাকায় সহজেই সবজি বিক্রি করা যায়। তবে এখন দাম অনেক কমে গেছে। এতে আমাদের লোকসানে পড়তে হচ্ছে।’
নান্দাইল বাজোরের সবজি ব্যবসায়ী রেনু মিয়া বলেন, ‘এ বাজার থেকে সবজি কিনে আমরা স্থানীয় বাজারে বিক্রি করি। তবে বাজারে সবজির দাম কম হলেও বিক্রি কম হওয়ায় খুব একটা লাভ হচ্ছে না আমাদের।’