ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের চরআলগী ইউনিয়নের পুরাতন ব্রহ্মপুত্র মরা নদীর (মরা খাল) ওপর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সেতু/কালভার্ট নির্মাণ কর্মসূচির আওতায় নির্মিত তিনটি বক্স কালভার্ট (ব্রিজ) ধসে গেছে। এতে বিপাকে পড়েছেন কয়েকটি গ্রামের হাজারো মানুষ।
উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের দাবি, পানি উন্নয়ন বোর্ডের খাল খননের জন্য ব্রিজ তিনটি ধসে পড়েছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ব্রিজগুলো নির্মাণের সময় বিধি অনুযায়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের অনুমোদন নেওয়া হয়নি এবং নির্মাণ ত্রুটির কারণে ধসে পড়েছে।
উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার চরআলগী ইউনিয়নের করতলী পাড়া-বোরাখালী সড়কের (পুরাতন ব্রহ্মপুত্র মরা নদীর) ওপর ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে ৪৭ লাখ ৪২ হাজার ৭১৮ টাকা ব্যয়ে ৬০ ফুট দৈর্ঘের একটি ব্রিজ নির্মাণ করে। একই খালের ওপর নয়াপাড়া গ্রামে ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ৩০ লাখ ৭৭ হাজার ৬৫৭ টাকা ব্যয়ে ৪০ ফুট দৈর্ঘের একটি ব্রিজ এবং পূর্ব টেকিরচর গ্রামে ২০১৭ সালে ৫৪ লাখ ৪ হাজার ৬৫১ টাকা ব্যয়ে ৬০ ফুট দৈর্ঘের একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হয়।
গত প্রায় এক বছর পূর্ব থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ড খালটি খননের কাজ শুরু করেন। এ অবস্থায় টেকির চর গ্রামের ৬০ ফুট দৈর্ঘের ব্রিজের নিচের বালি-মাটি সরে ব্রিজটি প্রায় ধসে গেছে। সম্প্রতি নয়াপাড়া গ্রামের ৪০ ফুট দৈর্ঘের ব্রিজটি সম্পূর্ণ এবং কুরতলী পাড়া-বোরাখালী ব্রিজের মাঝের অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে। যে কোন সময় ব্রিজটি সম্পূর্ণ ধসে পড়তে পারে।
নয়াপাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুল কাদির বলেন, ‘ভাইরে আমরার কপাল খারাপ। কিরুম বিরিজ (ব্রিজ) অইল কয় বছরেই ভাইঙ্গা পড়ছে।’
উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, ব্রিজ তিনটি নির্মাণ হয়েছে ৫-৭ বছর পূর্বে। এর মধ্যে বন্যা হলো, পানি হলো ব্রিজ ধসে যায়নি। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ডের খনন শুরু হতেই একেএকে তিনটি ব্রিজ ধসে গেছে। ব্রিজের নিচে খনন না হলে ৫০ বছরেও ব্রিজ ধসে যেত না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তাজুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তাকে নিয়ে ব্রিজগুলো পরিদর্শন করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। ভাঙা ব্রিজগুলো যেন কেউ ব্যবহার না করে ও জানমালের ক্ষতি না হয় সেই নির্দেশনা দিয়েছি।
ময়মনসিংহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মুসা বলেন, আমরা আমাদের ডিজাইন অনুযায়ী খালটি খনন করেছি। সরকারি পরিপত্র অনুযায়ী খাল বা নদীতে কোন স্টাকচার করতে হলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অনুমোদন নিতে হয়। তিনটি ব্রিজ নির্মাণের সময় কোনো অনুমোদন নেওয়া হয়নি। তা ছাড়া পাইলিংবিহীন দুর্বল স্টাকচারের উপর নির্মাণ বলেই হয়তো ব্রিজ তিনটি ধসে গেছে।