কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার সেকান্দরনগর সাহেব বাড়ি জামে মসজিদটি এ জেলার অন্যতম পূরাকীর্তি হিসেবে পরিচিত। ষোড়শ শতকের দিকে নির্মিত এ জামে মসজিদটি মোঘল আমলের স্থাপত্যের এক অনন্য নিদর্শন।
নান্দনিক স্থাপত্যকলায় নির্মিত সেকান্দরনগর সাহেব বাড়ি জামে মসজিদটি দেশি-বিদেশি পর্যটকদের প্রতিনিয়ত বিমোহিত করছে।
প্রাচীন এ মসজিদটির প্রত্নতাত্ত্বিক তাৎপর্যের কারণে মসজিদটি সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ একান্ত প্রয়োজন। এটি স্থানীয় বাসিন্দা ও মসজিদটি দেখতে আসা পর্যটকদের দীর্ঘদিনের দাবি। তাদের আশঙ্কা সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ করা না হলে মসজিদটি ভেঙ্গে গিয়ে এক সময় কালের গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।
সূত্র জানায়, সেকান্দরনগর সাহেব বাড়ি জামে মসজিদটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে নেয়ার জন্য ইতোমধ্যে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা মসজিদটি সরেজমিনে পরিদর্শন করে ছবি ও মৌজা ম্যাপসহ প্রতিবেদন দাখিল করেছেন।
পরবর্তী সময়ে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কর্তৃক প্রতিবেদনটি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য প্রেরণ করা হয়েছিল। কিন্তু অদ্যাবধি মসজিদটির সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপারে কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি।
১৯৯৮ সালের ১২ আগস্ট কিশোরগঞ্জের তৎকালীন জেলা প্রশাসক এ,এম,এম, ফরহাদ ৬০৭ নম্বর স্মারকে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তখনকার সচিব ড. এস. জামান মজুমদার বরাবরে একটি ডি.ও লেটারের মাধ্যমে (ডি.ও.নম্বর জে:প্র:কি: ৬৭-৬০৭) জেলার তাড়াইল উপজেলার সেকান্দরনগর সাহেব বাড়ি জামে মসজিদটি মূল্যবান প্রত্নসম্পদ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কর্তৃক রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিতে অনুরোধ করেন। যার অনুলিপি কার্যার্থে মহাপরিচালক প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছিল।
সেকান্দরনগর গ্রামের বাসিন্দা তাড়াইল প্রেসক্লাবের সভাপতি দেওয়ান ফারুক দাদ খান বলেন, প্রায় সাড়ে চারশত বছর আগে নির্মিত পূরাকীর্তি হিসেবে পরিচিত এ মসজিদটি দেখতে প্রতিনিয়তই ভ্রমণ পিপাসু বহু মানুষ এখানে ছুটে আসেন।
মসজিদের ইমাম মাওলানা সৈয়দ আবু সায়েম জানান, সেকান্দরনগর মৌজার ১নং খতিয়ানভূক্ত ৫৬৫ সাবেক দাগে ১০ শতাংশ ভূমির উপর কালের সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে মোঘল আমলে নির্মিত ঐতিহাসিক সেকান্দরনগর সাহেব বাড়ি জামে মসজিদটি। মসজিদের পবিত্রতা রক্ষার্থে সীমানা প্রাচীর করা খুবই দরকার।
মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি সৈয়দ বশির আহমেদ বলেন, ‘মসজিদ সংলগ্ন গভীর পুকুরটির পাড় যেভাবে ভেঙ্গে আসছে তাতে মসজিদটি হুমকির মুখে। পুকুর ঘেঁষে একটি প্রতিরক্ষা দেয়াল দেওয়া অতীব জরুরী।’
তাড়াইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. তারেক মাহমুদ বলেন, প্রাচীন এ মসজিদটিসহ অন্য পুরাকীর্তিগুলো রক্ষায় প্রশাসন সব সময়েই আন্তরিক।’
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জহিরুল ইসলাম ভূঞা শাহিন জানান, সেকান্দরনগর সাহেব বাড়ি জামে মসজিদের নির্মাণশৈলী ও স্থাপত্যে দৃষ্টিনন্দন কারুকাজের নিদর্শন প্রকাশ পায়। স্থাপত্য কলায় নির্মিত এগুলো তদারকি করার জন্য এলাকাবাসীর সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।