চেয়ারম্যানের লাগাতার ধর্ষণের শিকার হয়ে কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। ঘটনা ধামাচাপা দিতে বড় ভাই আওয়ামী লীগ নেতা ও আরো তিনজনকে নিয়ে কবিরাজের ওষুধ খাইয়ে গর্ভপাত করাতে গিয়ে মৃত্যু হয় কিশোরীর। এধরনের অভিযোগ এনে ঘটনার ১০ দিন পর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল আদালতে নালিশি আবেদন করে নিহত কিশোরীর বাবা।
গত মঙ্গলবার আদালত আবেদন আমলে নিয়ে থানাকে নির্দেশ দেন অভিযোগটি এফআইআরভুক্ত করে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য। এধরনের ঘটনা ঘটেছে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার উচাখিলা এলাকায়।
এই মামলার বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে স্থানীয় উচাখিলা ইউনিয়ন পরিষদে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে চেয়ারম্যানের পরিবারের লোকজন। অভিযুক্ত চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে তার পক্ষে সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ভাতিজা নাইবে জাহান মনি।
বক্তব্যে তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী কয়েকজন মিলে একটি মিথ্যা মামলা করিয়েছে। তারাও পরিবারের পক্ষ থেকে আইনি মোকাবেলাসহ মানহানি মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এছাড়া তারা দাবি করেন ওই কিশোরী মারা গেছে যক্ষার জীবাণু ছড়িয়ে ব্রেইনের রক্ত নালিতে বাসা বাঁধার কারণে ইশকেমিক স্ট্রোকে (লিখিত কাগজে এভাবেই লেখা রয়েছে) আক্রান্ত হয়ে।
স্থানীয় সূত্র ও আদালতে করা মামলার আরজি থেকে জানা যায়, ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার উচাখিলা ইউনিয়নের উচাখিলা বাজারের কাছে কৃষি বিভাগের সিডস্টোর নামক একটি পরিত্যক্ত ভবনে বসবাস করে ভুক্তভোগী কিশোরীর পরিবার। পাশেই স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম শফিকের বড় ভাই মঞ্জুরুল হক মঞ্জু মিয়ার বাড়ি। অন্যদিকে, শফিকুল ইসলাম জেলা শহর ময়মনসিংহ বসবাস করলেও ভাইয়ের বসতঘরের পাশের এবং ওই কিশোরীর ঘরের পাশেই তার এককক্ষবিশিষ্ট একটি ঘর রয়েছে।
গত ৯ মে ওই কিশোরী অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে ঢাকার একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে দুদিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় কিশোরী মারা যায়। এরপর থেকেই ঘটনাটি নিয়ে নানা গুঞ্জনের সৃষ্টি হয়।
নিহত কিশোরীর বাবা বিচার চেয়ে গত ২৩ মে ময়মনসিংহ জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল আদালতের বিচারক রাফিজুল ইসলামের কাছে মামলার আবেদন করেন। আদালত গত মঙ্গলবার মামলাটি আমলে নিয়ে ঈশ্বরগঞ্জ থানার ওসিকে নির্দেশ দেন মামলাটি এফআইআর করে রেজিস্ট্রিভুক্ত করার জন্য।
মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, উচাখিলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শফিকুল ইসলাম শফিক ওই কিশোরীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে লাগাতার ধর্ষণ করেন। এ ঘটনায় ওই কিশোরীর মায়ের সম্মতি ছিল বলেও মামলায় উল্লেখ করেন কিশোরীর বাবা। এতে ওই কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। এ ঘটনায় চেয়ারম্যান বিপাকে পড়লে তার বড় ভাই মঞ্জু মিয়াসহ পরিবারের সদস্যরা কবিরাজ ডেকে ওষুধ খাইয়ে গর্ভপাত করার চেষ্টা করে। এ সময়ও কিশোরীর মা সঙ্গে ছিলেন। এতে কিশোরী অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।
অভিযুক্ত চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম বলেন, আমি এই বিষয়ে কিছুই জানি না। সামনে নির্বাচন রেখে প্রতিপক্ষ এ ধরনের কর্মকাণ্ড করাচ্ছে।
চেয়ারম্যানের বড় ভাই মঞ্জুরুল হক মঞ্জু জানান, তার বাসার লাগোয়া ওই মেয়ে ও তার মাসহ বোনোরা বসবাস করে। গত বেশ কিছুদিন ধরে ওই কিশোরী মাথা ব্যথায় ভুগছিল। অনেক চিকিৎসা করেও ভালো হচ্ছিল না। মাথা ব্যথার কারণে প্রায়ই বমি করত। এ অবস্থায় উন্নত চিকিৎসার জন্য জেলা শহরে পাঠানোর ব্যবস্থা করে দেওয়া হয় সেখান থেকে ঢাকায় পাঠালে সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
এদিকে, নিহত কিশোরীর মা বলেন, স্বামীকে তিনি গত ২০১৭ সালে তালাক দিয়েছেন। এরপর পরিবারে সাথে তার কোনো যোগাযোগ নেই। এ ছাড়া তার মেয়ে মাথার সমস্যার কারণেই মারা গেছে। এখানে অন্য কোনো ঘটনা নেই।
ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কাদের মিয়া জানান, তিনি এ বিষয়ে এখনো আদালতের কোনো নির্দেশনা পাননি।