নেত্রকোনার খালিয়াজুরী উপজেলা খাদ্যগুদাম কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সরকার নির্ধারিত মূল্যে স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান ক্রয় কার্যক্রমে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সরকার দেশের খাদ্য নিরাপত্তা জোরদার করাসহ এবার হাওরাঞ্চলের কৃষকের উৎপাদিত ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে খালিয়াজুরী খাদ্যগুদামে এবার স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি লটারির মাধ্যমে ধান ক্রয়ে কৃষক নির্বাচনের কথা থাকলেও এখানে তা মানা হচ্ছে না। এ ছাড়া এখন পর্যন্ত তৈরি করা হয়নি প্রকৃত কৃষকদের নামের তালিকাও।
স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, খাদ্যগুদাম কর্তৃপক্ষ প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় না করে তারা নিয়মবহির্ভূতভাবে এলাকার প্রভাবশালী একটি ধান ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এ খাদ্যগুদামে ধান সংগ্রহ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এতে করে এলাকার প্রকৃত কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ধান খাদ্যগুদামে বিক্রি করতে না পেরে সরকার নির্ধারিত ধানের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার নেত্রকোনা জেলায় বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। হাওরাঞ্চলের কৃষকরা তাদের হাড়ভাঙা পরিশ্রমের একমাত্র ফসল ঘরে তুলতে পেরে মহাখুশি। সরকারি সিদ্ধান্ত মোতাবেক ২৬ এপ্রিল থেকে সারা দেশে একযোগে ধান ক্রয় কার্যক্রম শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় এবার খালিয়াজুরী খাদ্য গুদামে সরকারিভাবে ২ হাজার ৮ শত ৩৮ মেট্রিক টন ধান ও ৫০ মেট্রিক টন চাল ক্রয় করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। আর প্রতি মণ ধানের মূল্য নির্ধারণ করা হয় ১০৮০ টাকা এবং প্রতি মণ চালের মূল্য নির্ধারণ করা হয় ১৬০০ টাকা। এরই লক্ষ্যে নিয়ম অনুযায়ী লটারির মাধ্যমে প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয়ের কথা থাকলেও খাদ্য গুদাম কর্তৃপক্ষ নিয়মবহির্ভূতভাবে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ধান ক্রয় কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ায় স্থানীয় কৃষকদের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
খালিয়াজুরী উপজেলা সদর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য অজিত কুমার দাস বলেন, প্রকৃত কৃষকের তালিকা তৈরি না করেই খাদ্য গুদামের কর্মকর্তা তার পছন্দমতো প্রভাবশালী লোকদেরকে সরকারি খাদ্যগুদামে ধান দেওয়ার জন্য গুদাম থেকে খালি বস্তা দেওয়া হলেও আমি একজন প্রকৃত কৃষক হিসেবে ধান দেওয়ার জন্য ওই গুদামে খালি বস্তা আনতে গেলে গুদাম কর্মকর্তা আমাকে দেই-দিচ্ছি বলে সময়ক্ষেপণ করে যাচ্ছেন।
খালিয়াজুরী সদরের কৃষক নান্টু দে, রতন সরকারসহ আরো অনেক কৃষক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ধান এনে গুদামের সামনে রেখেছি। অথচ আমাদের ধান গুদামে নেওয়া হচ্ছে না। নেওয়া হচ্ছে প্রভাবশালীদের ধান। খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা তার পছন্দের লোকদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করছেন। তারা আরো বলেন, লটারির মাধ্যমে কৃষক নির্বাচনের আগেই রাতের আঁধারে প্রায় ৮ শত মেট্রিক টন ধান দিয়ে গুদাম ভরে রেখেছেন খাদ্য কর্মকর্তা। গত ১৭ মে কৃষক নির্বাচনের কথা থাকলেও এখনো হয়নি কৃষক নির্বাচন।
নান্টু ও রতন বলেন, ধান এনে গুদামে রাখায় বৃষ্টিতে ভিজছে আমাদের ধান। তার পরেও আমাদের ধান নিচ্ছে না। রাতের অন্ধকারে পরে যারা আনছে তাদের ধান দিয়ে গুদাম ভরছে। আমাদের ধান নষ্ট হচ্ছে, এখন আমরা কী করব বুঝে উঠতে পারছি না।
খালিয়াজুরী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. হাবিবুর রহমান বলেন, আমাদের এখানে অ্যাপস না থাকায় আমরা উন্মুক্তভাবে কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় করছি।
খালিয়াজুরী খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত খাদ্য কর্মকর্তা (ওসি, এলএসডি) দীপায়ন দত্ত মজুমদার বলেন, আমাদের কাছে মেইল আছে, যেসব উপজেলায় অনলাইনে আবেদনের সুযোগ নেই, সেসব উপজেলায় লটারির আগে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ধান ক্রয়ের নির্দেশ রয়েছে। তাই আমরা এখন অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ধান নিচ্ছি।
অভ্যন্তরীণ ধান ক্রয় সংগ্রহ বিষয়ে জানতে চাইলে খালিয়াজুরী সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ছানোয়ারুজ্জামান তালুকদার জোসেফ বলেন, কে বা কারা খাদ্য গুদামে ধান দিচ্ছে এ বিষয়ে আমি অবগত নই। তবে তালিকা অনুযায়ী খালিয়াজুরী সদর ইউনিয়নের কোন কোন কৃষক খাদ্যগুদামে ধান দিয়েছে তার পূর্ণাঙ্গ তালিকা চেয়ে আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত পত্র প্রেরণ করেছি।
সরকারি কার্যদিবসে খাদ্যগুদামে গেলে সেখানে খাদ্য নিয়ন্ত্রককে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা রুবাইদুর রানা বলেন, আমরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ধান সংগ্রহ করছি। অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ ব্যতীত আমার পক্ষে এর চেয়ে বেশি কিছু বলা সম্ভব না।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ এইচ এম আরিফুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমার কাছে মৌখিক অভিযোগ এসেছে, কোনো লিখিত অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।