সড়কের কোথাও পিচঢালাই উঠে তৈরি হয়েছে ছোট-বড় গর্ত। কোথাও চলছে খোঁড়াখুঁড়ি। কোথাও সড়ক বিভাজকের দুই পাশে জমেছে বালুর স্তূপ। কোনো যানবাহন এলে বা আচমকা বাতাসে বালু ও ধুলা ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকায়। ধুলাবালু উড়ে গিয়ে পড়ে আশপাশের দোকানে। হাত দিয়ে নাক-মুখ চেপে চলাচল করতে হয় পথচারী ও স্থানীয় লোকজনকে।
ধুলার দূষণের এই চিত্র ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের আবদুল্লাহপুর থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত। এখানে ১২ কিলোমিটার সড়ক বেহাল হয়ে আছে দীর্ঘদিন। বিভিন্ন অংশে পিচঢালাই উঠে গেছে, খানাখন্দে ভরা। যানবাহন চলে হেলেদোলে। এর মধ্যেই নতুন করে যুক্ত হয়েছে ধুলার যন্ত্রণা। দিন–রাত ২৪ ঘণ্টা সড়কজুড়ে বইতে থাকে ধুলার ঝড়।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, সড়কটিতে দীর্ঘদিন ধরে চলছে বিআরটি প্রকল্পের উন্নয়নকাজ। এতে সড়কের বিভিন্ন অংশে তুলে ফেলা হয়েছে পিচঢালাই, চলছে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ। বিভিন্ন অংশে পড়ে আছে মাটি ও বালু। বাতাস বা যান চলাচলের সময় এসব বালু বা ধুলা উড়ে সৃষ্টি হয় ভোগান্তির। কিন্তু এসব ধুলাবালু কমাতে নেই কর্তৃপক্ষের কোনো কার্যকর উদ্যোগ। মাঝেমধ্যে দু-এক দিন পানি ছিটালেও তা নামমাত্র। এতে ভোগান্তি থাকছে একই রকম।
সড়কটির আবদুল্লাহপুর থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ঘুরে দেখা যায়, সড়কের বিভিন্ন অংশে পিচঢালাই উঠে গেছে। কোথাও কোথাও তৈরি হয়েছে ছোট-বড় গর্ত। এসব গর্তে জমে আছে মাটি বা বালু। সড়কের কিনারা বা বিভাজকের মাঝখানে জমে আছে বালুর স্তূপ। সড়কের ধারে পড়ে আছে ইটের খোয়া, বালু বা বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রী। এর মধ্যেই চলাচল করছে ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, রিকশা, অটোরিকশাসহ অন্যান্য যানবাহন। এসব যানবাহন চলাচলের সময় ধুলা ছড়িয়ে পড়ছে পুরো এলাকায়। এর মধ্যে একাধিক যান একসঙ্গে বা বাতাস এলে তৈরি হচ্ছে এ ধরনের ধুলার ঝড়।
সবচেয়ে খারাপ অবস্থা আবদুল্লাহপুর থেকে টঙ্গী স্টেশন রোড পর্যন্ত। এখানে আনুমানিক ৬০০ মিটার সড়কের পুরোটাতেই জমে আছে ধুলার আস্তরণ। এর বাইরে কামারপাড়া সড়কের মোড়, চেরাগ আলী, গাজীপুরা বাসস্ট্যান্ড, ভোগড়া বাইপাসসহ বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে ধুলার রাজত্ব। সড়কের আশপাশের দোকান, মার্কেট বা পথচারী টিকতে পারছে না ধুলার যন্ত্রণায়। ধুলার কারণে কোনো কোনো যানবাহনও চলছে ধীরগতিতে।
ভোগড়া এলাকায় সড়কের বাঁ পাশে মেঘনা গ্লাস হাউস নামের একটি দোকানে কাজ করেন সুমন দাস ও মো. বাবু মিয়া। রোববার সকালে তাঁদের দুজনকেই দেখা গেল কাপড় দিয়ে নাক–মুখ ঢাকা অবস্থায়। জানতে চাইলে তাঁরা দুজন বলেন, সড়কে ২৪ ঘণ্টাই ধুলা উড়তে থাকে। এসব ধুলা উড়ে আসে তাঁদের দোকানে। ধুলার কারণে দোকানের মালামাল বারবার পরিষ্কার করতে হয়, অনেক সময় মালামাল নষ্ট হয়ে যায়। সারাক্ষণই তাঁদের ধুলার যন্ত্রণায় ভুগতে হয়।
সুমন দাস বলেন, যতক্ষণ দোকান খোলা থাকে, ততক্ষণই ধুলার সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয়। তাই বাধ্য হয়েই নাক-মুখ ঢেকে রাখতে হয়।
একই এলাকায় একটি মার্কেটের নিরাপত্তাকর্মীর কাজ করেন মো. ইউসুফ আলী। ধুলা নিয়ে কথা তুলতেই তিনি বলেন, ‘এ এক নিদারুণ যন্ত্রণা। ২৪ ঘণ্টায়ই ধুলার মধ্যে ডিউটি করতে হয়। ধুলায় কখনো কখনো নিশ্বাস নিতেও কষ্ট হয়। অনেক সময় অতিষ্ঠ হয়ে নিজেরাই সড়কে পানি ছিটাই। সড়কের লোকজন মাঝেমধ্যে পানি দেন, কিন্তু তাতে সে রকম কোনো কাজই হয় না।’
এদিকে ধুলা থেকে বাঁচতে সড়কের পাশে থাকা অনেক দোকানি তাঁদের দোকানে পর্দা লাগিয়েছেন। আবার রাস্তায় চলাচলকারী পথচারী বা মোটরসাইকেলচালক অনেককেই ব্যবহার করতে দেখা গেছে ধুলা প্রতিরোধক জ্যাকেট। এর মধ্যে টঙ্গী কলেজগেট এলাকায় কথা হয় মোটরসাইকেলের চালক মো. মাহমুদুল হাসানের সঙ্গে। তিনি বলেন, জ্যাকেট পরা ছাড়া একমুহূর্তও গাড়ি চালানো যায় না। ধুলায় কাপড় সঙ্গে সঙ্গে ময়লা হয়ে যায়। তাই গরমের মধ্যেও বাধ্য হয়ে আলাদা জ্যাকেট পরতে হয়।
এদিকে ধুলা নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করতে দেখা গেছে সড়কে কর্তব্যরত একাধিক ট্রাফিক পুলিশ সদস্যকে। তাঁরা বলছেন, সড়কটিতে নিয়মিত বা পর্যাপ্ত পানি দেওয়া হয় না। যেদিন ঠিকমতো পানি দেওয়া হয়, সেদিন তাঁরা শান্তিতে ডিউটি করতে পারেন। কিন্তু সেভাবে পানি না দেওয়ায় ধুলার মধ্যেই তাঁদের প্রতিনিয়ত কাজ করতে হয়।
ভোগড়া বাইপাস মোড়ে নাম না প্রকাশের শর্তে ট্রাফিক পুলিশের এক সদস্য বলেন, এরা এক দিন পানি দেয় তো দুই দিন খবর থাকে না। তাই ধুলার যন্ত্রণাও কমে না। ঠিকমতো পানি দিলে রাস্তাটা সুন্দর থাকে, মানুষও চলাচলে স্বস্তি পায়।
বিআরটি প্রকল্পের পরিচালক এ এস এম ইলিয়াস হোসেন বলেন, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়মিত পানি দিতে বলা হয়। তারাও পানি দেয়। তবে শুকনা মৌসুমের কারণে কিছুক্ষণের মধ্যেই তা শুকিয়ে যায়। এরপরও ধুলা কমাতে আমরা বেশি করে পানি দেওয়ার বিষয়টি দেখছি।’